বর্তমান বিশ্বে ১৯৫ টি স্বাধীন দেশ আছে। তারা নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যেহেতু অর্থ ক্ষমতার মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত সেহেতু বিশ্বের সকল দেশ সমান ক্ষমতাধর নয়। এই ক্ষমতার সমন্বয় করার জন্য পৃথিবীতে জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে। কিন্তু তারপরেও পৃথিবীতে শান্তি কাজ করে না। এর পেছনে সবথেকে বড় কারণ দারিদ্রতা যা মাথাপিছু আয় এবং দেশের মোট রিজার্ভের উপর নির্ভর করে হিসেব করা হয়। এদিক থেকে বর্তমান বিশ্বে অনেক কয়েকটি দরিদ্র দেশ আছে যারা অনেক নিম্নমানের জীবন যাপন করে। আমাদের আজকের পোষ্টে আমরা বিশ্বের দরিদ্র দেশের তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো। কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
বিষয় বস্তুসমূহঃ
Central African Republic
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক আফ্রিকা মহাদেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ। এখানে সোনা, হীরা এবং প্রচুর পরিমাণ তেল পাওয়া যায়। এতকিছু থাকার পরেও এই দেশ বিশ্বের সবথেকে দরিদ্র দেশ। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। তাদের অর্থনীতি ধিরে ধিরে উন্নতির দিকে যাচ্ছিল এমন সময় ২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। খিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যকার ধর্মীয় যুদ্ধ তাদের ইকোনমিক অগ্রগতি একদম স্লো করে দেয়। বর্তমানে তাদের মোট ৪.৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি গ্রামে এবং বাকি অংশ শহরে বাস করে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মোটামুটি ৯০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে এবং ৬১.৮ শতাংশ মানুষ অপুষ্টি সমস্যায় ভোগে। অর্থনীতির মানদণ্ডে তাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ৬৬৩ মার্কিন ডলার।
Burundi
বুরুন্ডি বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্র দেশ। তাদের মোট গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ৬৮৬ মার্কিন ডলার। ১৯৯৪ সালের দিকে তাদের দেশে টুটসি এবং হুটু জাতীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই গৃহযুদ্ধ টানা ১২ বছর ব্যাপী চলে যা তাদের অর্থনীতি উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করে। দুর্নীতিতে বুরুন্ডি লিস্টের সবার প্রথমের দিকেই থাকে এবং মোট ১০.৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ গ্রামে বসবাস করে। বাকি ১৩ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ ইলেক্ট্রিসিটি ইউজ করে। তবে সেখানে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ হেলথকেয়ারের ব্যবস্থা আছে।
Democratic Republic of the Congo
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ দ্য কঙ্গো একটি গৃহযুদ্ধের দেশ। এখন পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে কঙ্গোতে ৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। তাদের মোট জনসংখ্যা ৮১.৩ মিলিয়ন এবং গড় আয়ু ৬০ বছর। কঙ্গোর গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ৭৯৬ মার্কিন ডলার। তারা বিশ্বের তৃতীয় দরিদ্র দেশ। কঙ্গো একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। এখানে কপার, হীরা, সোনা আছে। এসকল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েই তাদের দেশে গৃহযুদ্ধের শুরু হয়ে থাকে। শিশুমৃত্যুর সূচকে কঙ্গো সবথেকে উপরের একটি দেশ। তারা যদি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারে তবে খুব তারাতারি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে।
Niger
নাইজার চাঁদ এবং মালি এর মধ্যকার একটি আফ্রিকান রাষ্ট্র। তারা ১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে নিজেদের স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তারপরেই তাদের পলিটিক্যাল সমস্যা শুরু হয় এবং অর্থনীতির সাথে সাথে জীবনযাপনের মান নিম্ন থেকে নিম্নতর হতে থাকে। বর্তমানে তাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ৯০৬ মার্কিন ডলার। নাইজার বিশ্বের চতুর্থ দরিদ্রতম দেশ। এখানে মোট ২১.৫ মিলিয়ন মানুষ বাস করে যার ৮০ শতাংশ গ্রামে বাস করে। মোট জনপদের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ ইলেক্ট্রিসিটি ইউজ করার সুবিধা ভোগ করে। যদিও নাইজারে তেল এবং সোনা প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে মজুত আছে কিন্তু তারপরেও অর্থনীতি উন্নতির গতি খুব ধীরগতি। তবে ২০১৭ সালের তথ্যমতে তাদের ইকোনমিক গ্রোথ পূর্বের থেকে ৪.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
Malawi
মালাউই বিশ্বের পঞ্চম দরিদ্র দেশ যাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১০৬৪ মার্কিন ডলার। তাদের মোট জনসংখ্যা ১৮.৬ মিলিয়ন এবং তাদের ৮০ শতাংশ কৃষক। একটি জরিপে দেখা গেছে মালাউই এর প্রতি দশ জনে ১ জন এইচআইভি পজেটিভ। অর্থাৎ এইচআইভি তাদের দেশে একটি মহামারির নাম। তারা এখনো এই রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করছে। বিবিসির মতে তাদের দেশে এইচআইভির কারনে ১ মিলিয়নের থেকেও বেশি শিশু অনাথ হয়ে গেছে।
Liberia
লাইবেরিয়া বিশ্বের ষষ্ঠ দরিদ্র দেশ। এই দেশের ইতিহাস একটু অন্যরকম। কারণ লাইবেরিয়া প্রতিষ্ঠার পেছনে ইউএসের সংযোগ আছে। অর্থাৎ ইউএস থেকে মুক্তি পাওয়া দাস গুলো এই দেশ প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে তাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১০৭৮ মার্কিন ডলার। তাদের দারিদ্রতার পেছনে অশিক্ষা, দুর্নীতি এবং ১৯৯০ এবং ২০০০ সালের গৃহযুদ্ধ দায়ী। লাইবেরিয়া সোনায় পরিপূর্ণ একটি দেশ এবং ২০১৭ সালের দিকে তারা মোটামুটি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সোনা এক্সপোর্ট করেছে। তবে তাদের দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ ইলেক্ট্রিসিটি ইউজ করে। অন্যদিকে ৩৯ শতাংশ জনগন অপুষ্টি সমস্যায় দিনযাপন করে।
Mozambique
মোজাম্বিক একটি আফ্রিকান রাষ্ট্র যারা পূর্বে পর্তুগীজ কলোনি ছিল। তারা ১৯৭৫ সালে তাদের স্বাধীনতা লাভ করে। তারা বর্তমান বিশ্বের সপ্তম দরিদ্র দেশ যাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১১০০ মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর যখন তারা দেশ পুনর্গঠন শুরু করে তখন স্বাধীনতার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সে যুদ্ধ ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলে যা অর্থনৈতিক অবকাঠামো একদম দুর্বল করে দেয়। তবে ২০১২ সালে যখন মোজাম্বিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের আবিস্কার হয় তখন তাদের অর্থনীতির চাকা উন্নতির দিকে ঘোরা শুরু করে। অন্যান্য দরিদ্র দেশের মতই তাদের দেশে স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। তাদের মোট জনসংখ্যার ১২.৫ শতাংশ এইচআইভি পজেটিভ।
Madagascar
মাদাগাস্কার স্বাধীনতার পূর্বে ফ্রান্সের কলোনি হিসেবে পরিচিত ছিল। তারা ১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। মাদাগাস্কার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি দেশ। তাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১৩৩৯ মার্কিন ডলার। তাদের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিকাজ বাদেও পর্যটন খাত থেকেও ভালো আয় হয়। তাদের উন্নতির প্রধান বাঁধা হলো পলিটিকাল ভায়োলেন্স যা তাদের অর্থনীতি দুর্বল করে দিচ্ছে। মাদাগাস্কারে মোট ২৫.৬ মিলিয়ন মানুষ বাস করে যাদের মধ্যকার ৭৭ শতাংশের বেশি বস্তিতে থাকে। তারা বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম দরিদ্র দেশ যাদের মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে।
Sierra Leone
প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ সিয়েরা লিওন যা আফ্রিকার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তাদের দেশে হীরা সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যা তাদের সমৃদ্ধ করেছে। তবে এই সম্পদের লোভে পরেই তারা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ২০০২ সালে তাদের গৃহযুদ্ধ শেষ হয় কিন্তু এতদিনে তাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভেঙে পরেছে। তাদের মোট জনসংখ্যা ৭.৬ মিলিয়ন এবং এর অর্ধেক মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। সিয়েরা লিয়নের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১৩৪৮ মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাস আঘাত হানার কারনে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা এখন পর্যন্ত নিম্নপর্যায়েই আছে। তাদের প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১৩৬০ জন মৃত্যুবরণ করে। অর্থাৎ মৃত্যুহার স্বাভাবিকের থেকে অনেক অনেক বেশি। সিয়েরা লিয়ন বিশ্বের নবম দরিদ্র দেশ।
The Gambia
দ্যা গাম্বিয়া বিশ্বের দশম দরিদ্র দেশ যাদের গ্রোস ন্যাশনাল ইনকাম (GNI) ১৪৭১ মার্কিন ডলার। গাম্বিয়া একটি কৃষি প্রধান দেশ তবে তারা ব্রাজিলিয়ান বাদাম এবং কাঠ বাইরে রপ্তানি করে। তাদের মোট পপুলেশন ২.১ মিলিয়ন যাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক আছে। অন্যান্য আফ্রিকান দেশের মত তাদের দেশে তেমন বিশৃঙ্খলা নেই। তবে মোট জনসংখ্যার যে অংশ শহরে থাকে তাদের বেশিরভাগ বস্তিতে বাস করে।
আধুনিক যুগে অনেক দরিদ্র দেশ উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের অবস্থার পরিবর্তন করছে। তবে এতকিছুর মধ্যেও কিছু কিছু দেশ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। এখানে আমরা বর্তমান সময়ের ১০ টি দরিদ্র দেশ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক বিশ্বের ১০ টি ধনী দেশ সম্পর্কে। লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।