পা ফেটে যায় কেন

পা ফাটা শুধু সৌন্দর্যহানি করে না সেই সাথে ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি করে। পা ফাটার অন্যতম কিছু কারণ হলো পায়ে অতিরিক্ত চাপ পড়া, পায়ের যত্ন না নেয়া,শুষ্ক ত্বক ইত্যাদি পা ফাটার কারণ। সাধারণত আমরা শুধু মুখের সৌন্দর্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি, কিন্তু একেবারেই পায়ের যত্ন নেয়া হয় না বললেই চলে। মুখের সাথে সাথে আমাদের পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। পায়ের গোড়ালি ফাটা খুব কষ্টকর ও গোড়ালি ফাটার ফলে অনেক সময় রক্ত পর্যন্ত বের হয়। আর এর পিছনে রয়েছে সচেতনতার অভাব ও ত্বকের যত্নের অভাব।

পায়ে অতিরিক্ত চাপ

অতিরিক্ত হাটাহাটি করার কারণে পায়ে চাপ পড়ে এটি একটি পা ফাটার কারণ। অতিরিক্ত পায়ে চাপ দেওয়া, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা হাটা, সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার না করা ইত্যাদি পায়ে চাপ সৃষ্টি করে যার কারণে পা ফাটে।

শুষ্ক ত্বক

শুষ্ক ত্বক পা ফাটার অন্যতম কারণ। ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা, অনেকক্ষণ ধরে গোসল করা, এয়ারকন্ডিশন রয়েছে সব ঘরে বেশিক্ষণ অবস্থান করা ইত্যাদি আমাদের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।

এক্সিমা

ত্বকের এক ধরনের রোগ হচ্ছে এক্সিমা। এই এক্সিমা রোগের ফলে ত্বকের বিভিন্ন অংশ ফেটে যায়, লালচে ভাব হয়ে পড়ে এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মুখ, কনুই, পায়ের পাতা, স্ক্যাল্পে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এই এক্সিমা যদি কারো থাকে তাহলে পা ফাটার সমস্যা বেশি হতে পারে।

ফাঙ্গাসের আক্রমণ

পা পরিষ্কার না রাখার কারণে অনেক সময় ফাঙ্গাসের আক্রমণ হয়। যার ফলে পা খসখসে হয়ে পড়ে আর পা ফাটার সমস্যা হয়।

অতিরিক্ত ওজন

অতিরিক্ত ওজন খুবাই খারাপ। অতিরিক্ত ওজন শরীরের নানা রকম রোগের পাশাপাশি আপনার পা ফাটার অন্যতম কারণ হতে পারে। আপনার যখন অতিরিক্ত ওজন হবে তখন আপনার পা আপনার শরীরের ওজন বহন করতে পারবে না। তাই আপনার পায়ের গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ পরবে এবং পায়ের গোড়ালি ব্যাথা ধরবে। এখাবে কিছু দিন চলার পর আপনি দেখতে পাবেন আপনার পায়ের গোড়ালি ফেটে গেছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব আপানার ওজন কমানোর পদ্ধাতি গ্রহণ করে ওজন কমাতে হবে।

পা ফাটার অন্যান্য সাধারণ কারন

উপরোক্ত কারণ গুলোর পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্যাভাস এর জন্যও আপনার পা ফাটতে পারে। যদি আপনার নিয়মিত খাবারের মধ্যে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বা খাদ্য উপাদার না থাকে তাহলে সেটিও আপনার পা ফাটার কারণ হতে পারে। তেমনি আমাদের দৈনন্দিন জীবণযাপন ও চলাফেরার মধ্যেও কিছু অনিয়ম আমাদের পা ফাটার কারন হতে পারে। যেমন-

  • শরীরে যদি ভিটামিনের অভাব হয় তাহলে পা ফাটে এবং মানব দেহে জিংক, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়া পা ফাটার অন্যতম একটি কারণ। 
  • শরীরে পানিশূন্যতার কারণে পা ফেটে যায় এবং এটি একটি অন্যতম কারণ। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন এতে পানিশূন্যতা দূর হবে।
  • দীর্ঘদিন ধরে পায়ের যত্নের অভাব, অতিরিক্ত পুষ্টির অভাব, ধুলাবালি, খুব বেশি গরম পানিতে গোসল, অপরিচ্ছিন্ন জুতা পড়া। 
  • পা অল্প ফেটে গেছে এমন স্থানের চামড়া জোরে জোরে টেনে ছিড়ে দেয়া বা টেনে তোলা।
  • অনেকের আবার জেনেটিক ভাবে পা ফাটা সমস্যা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মা-বাবা, চাচা কারো যদি এই পা ফাটা সমস্যা থেকে থাকলে ছেলে-মেয়েরাও এই বংশগত পরম্পরায় পেয়ে থাকে।
  • নিয়মিত প্রতিদিন পায়ে ভাসলিন বা ময়েশ্চার ব্যবহার করার পরে তা ভালোভাবে পরিষ্কার না করে আবার পায়ে ক্রিম, ময়েশ্চার বা লোশন ব্যবহার করা।
  • যেকোন শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে পায়ের আর্দ্রতার পরিমাণ কমে আসতে থাকে এবং তখন পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার প্রবনতা তৈরি হয়। 
  • পায়ের গোড়ালি সব সময় কাদা পানিতে ভিজে থাকলেও পা ফাটার সমস্যা হতে পারে। 
  • অমসৃণ জুতা অতিরিক্ত ব্যবহার করলেও পা ফেটে যায়।

পা ফাটলে করণীয়

আমার প্রায় সকলেই কম-বেশি এই রোগরে সম্মূখীন হয়েছি বা সরাসরি এই রোগীদের দেখেছি। তাই এবার আমার জানবো এই রোগ হেল কিভাবে তা থেকে মুক্তি মিলবে।

  • পা অপরিচ্ছন্ন থাকলে পায়ে ভাসলিন, লোশন বা ময়েশ্চার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পায়ের গোড়ালি যদি ফেটে যায় বা চামড়া ওঠে তাহলে চামড়া টেনে ছিঁড়বেন না। 
  • ফলমূল, শাক-সবজি শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। এর পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য নিয়মিত প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 
  • বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করুন। যদি খুব ঠান্ডা লাগে সে ক্ষেত্রেও পায়ের গোড়ালিতে অতিরিক্ত গরম পানি পায়ে ঢালবেন না বরং হালকা কুসুম কুসুম গরম পানি গোড়ালিতে ঢালতে পারেন। 
  • ডায়াবেটিস উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সব সময় ত্বকের সাথে পায়েরও যত্ন নিন।
  • পায়ের জুতা ব্যবহার করার পর নিয়মিত রোদে দিন। ফলে জুতায় রোগ-জীবণু জন্ম নিবে না। আর জন্ম নিলেও রোদে দেয়ার ফলে তা মারা যাবে।
  • যাদের পা খুব বেশি ঘেমে যায় ও ঘামে জুতা ভিজে যায় তাদের পায়ের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।
  • সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে পায়ের গোড়ালি ময়েশ্চার বা লোশন সঠিকভাবে মসৃণ রাখা যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
  • পায়ের যত্নে মধু অত্যন্ত কার্যকারী উপাদান। হালকা এক বালতি গরম পানিতে এক কাপ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি পায়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন। প্রায় ২৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত এই ম্যাসাজ করতে পারেন আবার পা ঘষা পাথর দিয়ে পায়ের শক্ত চামড়া ঘষে পরিষ্কার করুন, এতে ভালো উপকার পাবেন।
  • তিলের তেল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, বাদাম তেল ও নারকেলের তেল পা ফাটা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি ভালো সমাধান। যে কোন একটি ভেজিটেবল তেল রাতে লাগিয়ে নিতে পারেন, এত পা ফাটা অনেকটাই কমে আসবে।
  • লেবুর রস ও ভ্যাসলিন পা ফাটা রোধে অনেকটাই উপকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে লেবুর রসের সাথে কয়েক ফোটা ভ্যাসলিন মিশিয়ে পা ফাটা স্থানে লাগালে পা ফাটা অনেকটা কমে যাবে। 
  • তিন চামচ বেকিং সোডা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নিন এবং এই মিশ্রণে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। প্রায় ২০ মিনিট এভাবে বসে থাকলে পায়ের ত্বক অনেক সফট ও কোমল হবে। তারপর পানি থেকে পা তুলে পা ঘষার পাথর দিয়ে পা সুন্দর করে পরিষ্কার করতে হবে।

আবার গ্লিসারিনের সাথে অল্প পরিমাণ গোলাপ জল মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে মিশ্রনটি পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিয়ে পরের দিন সকালে ধুযে ফেলুন। তাহলে দেখবেন ব্যথা কমবে ও গোড়ালির ফাটা অনেকটা কমে গেছে। সরিষার তেলের সঙ্গে মোমবাতির মোম মিশিয়ে ফাটা স্থানে সারা রাত লাগিয়ে রাখুন। এতে পা ফাটা কিছুটা কমে যাবে। তিলের তেল পা ফাটা সমাধানে দারুণ কার্যকর। পায়ে তিলের তেল ব্যবহার পা ফাটা দূর হয়। আধা বালতি হালকা গরম পানিতে এক কাপ মধু মিশিয়ে ২০-২৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন, এটি পা ফাটা দূর করতে সহায়তা করে। কয়েক ফোটা লেবুর রসের সঙ্গে ভ্যাসলিন মিশিয়ে ফাটা স্থানে ম্যাসাজ করুন, এতে দ্রুত পা ফাটা সেরে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *