যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে

দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাবার প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত আমরা যেসব খাবার খেয়ে থাকি সেসব খাবারে ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন এক ধরনের ফ্যাট বার্নিং। যা আমাদের দেহের চোখের দৃষ্টি, গ্রোথ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করে থাকে। ভিটামিন এর অভাবে আমাদের বিভিন্ন রকম রোগ হয়ে থাকে যার ফলে আমরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সবারই জেনে রাখা উচিত। খাবার আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং তাই শরীর সুস্থ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। 

শরীরের জন্য খাবারের পাশাপাশি ভিটামিনেরও প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি, না হলে বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে এবং শরীর তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে। ভিটামিন শুধু আলট্রা ভায়োলেশন রেডিয়েশন ড্যামেজ থেকে স্কিনকে রক্ষা করে না পাশাপাশি আমাদের সুস্থও রাখে। বিভিন্ন ধরনের খাবারে যেসব ভিটামিন রয়েছে সেগুলো ত্বকের অপরিপক্কতা,  অন্ধত্ব এবং শ্বাসনালীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রকম রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভিটামিন পূরণ করা সম্ভব এবং সব ধরনের ভিটামিন শরীরের জন্য অত্যাধিক প্রয়োজন। খাবারে ভিটামিনের অভাবে শরীরে ক্লান্তি, অবসাদ, মানসিক চাপসহ নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। ভিটামিন যুক্ত খাবার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর রেডিকেল ধ্বংস করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন খাবারে কি কি ভিটামিন রয়েছে।

যেসব খাবারে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে

দুধ, ডিম, শাক-সবজি, গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, চিজ, অ্যাপ্রিকট, পেঁপে, মটরশুঁটি, লাল শাক, আম ইত্যাদি ত্বক ও চুলের জন্য অধিক উপকারী। এগুলোতে ভিটামিন এ রয়েছে।

মাছ, মাংস, শস্যদানা, ডিম, ডেইরি প্রোডাক্ট এর সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন বি রয়েছে যা হজম ক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এই খাবার গুলো আমাদের ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করে। 

তরমুজ, কলা, পেয়াজ, কিশমিশ, ডুমুর, আলু. আম, পেয়ারা, জাম, আঙুর, আনারস, পেঁপে, গাজর, চেরিফল, কিউই ফল, ফুলকপি, কাঁচা মরিচ, ব্রকলি, টমেটো, লেটুসপাতা, কমলালেবু, স্ট্রবেরিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। 

এসব খাবার আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে এবং এগুলো শরীরের বিভিন্ন টিস্যু ভালো রাখতে সাহায্য করে।

দুধ, ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি রয়েছে। এসব খাবার প্রতিদিন নিয়মিত খেতে হবে। ভিটামিন ডি হাড় গঠন ও দাঁতের জন্য খুব জরুরী। হাড়, দাঁত শক্ত ও মজবুত করার জন্য অনেক উপকারী। তাছাড়াও দেহের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। শরীর ভালো রাখতে হলে ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার আর এই সব খাবার আমাদের ভিটামিন ডি অভাব পূরণে সহায়তা করে। 

বিভিন্ন ধরনের বাদাম, পাম অয়েল, শস্যদানা, সূর্যমুখির তেল, ডিমের কুসুম সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদিতে ভিটামিন ই রযেছে। ভিটামিন ই শরীরের টিস্যু গঠনে সাহায্য ও ফুসফুসকে রক্ষা করে এবং এসব খাবার আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। এই খাবার নিয়মিত খেলে ভিটামিন ই এর অভাব দূর করে। 

সব ধরনের ভিটামিন শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন। সরিষা শাক, পুঁইশাক, বাঁধাকপি, পার্সলে, সয়াবিন তেল, ডেইরি প্রোডাক্ট, ব্রকলি এই সব সবজিতে প্রচুর ভিটামিন কে বিদ্যমান থাকে। শরীরের কোথাও যদি কেটে যায় তাহলে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে ভিটামিন কে।

কলিজা

কলিজা মোটামুটি সবাই খেয়ে থাকে এবং পছন্দ করে থাকে। কলিজায় রয়েছে আয়রনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর কলিজায় প্রায় ৬৫০০ আইইউ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। অপরদিকে ছাগলের প্রতি ১০০ গ্রাম কলিজায় ভিটামিন এ এর পরিমাণ ৫৭০০ আইইউ এবং মুরগির ১০০ গ্রাম কলিজায় ভিটামিন “এ” এর পরিমাণ আরো অধিক।

গাজর

গাজর সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায় ও কাঁচা অবস্থায় এমনিতেও খাওয়া যায়। আবার গাজরের হালুয়া তৈরি করেও খাওয়া হয়। গাজরে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে তা একজন মানুষের গড় চাহিদার ৩৩৪ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু সচরাচর সিদ্ধ করে খাওয়া হয় এবং এই মিষ্টি আলুই মানুষের দৈনন্দিন ভিটামিন “এ” এর অভাব পূরণ করছে আবার এটি গড় চাহিদার প্রায় ৪৩ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। মিষ্টি আলু ত্বকের কোষের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।

কুমড়া ও টমেটো : কুমড়াতে ভিটামিন “এ” রয়েছে ,খাবারে ১০০ গ্রাম কুমড়া যোগ করলে সেটি আপনার চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করতে পারে আবার টমেটোতে ক্যালরি অল্প থাকলেও এর মিনারেল কনটেন্ট রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “এ”। মাঝারি আকারের একটি টমেটো আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। 

সবুজ শাক-সবজি

সবুজ শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টিামিন “এ”। তাছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম,আয়রন,ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং কে পর্যাপ্ত রয়েছে। প্রতিদিন খাবারে বেশি বেশি শাক সবজি খেতে হবে কারণ শাক-সবজি চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে এবং ভিটামিন “এ” এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। 

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে আবার মাছ ও মাছের তেল ভিটামিন “এ’ রয়েছে। তাছাড়া ছোট মাছ যেমন- মলা মাছ,পুঁটি মা,ঢেলা মাছ খেলে দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে।

কমলালেবু

ছোট বড় সবধরনের কমলালেবুতে ভিটামিন “সি” থাকে। তবে একটা বড় কমলালেবুতে ৮২ মিলিগ্রাম বিদ্যমান থাকে ভিটামিন “সি”। এই কমলালেবু ভিটামিন “সি” এর অভাব দূর করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। কমলালেবু রক্তশূন্যতা ও জিহ্বার ঘা সারাতে কাজ করে। এচাড়াও সর্দি কাশি সারায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

লাল ক্যাপসিকাম

শরীরের ৯৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি” পৌঁছে দেয় আধা কাপ কাঁচা লাল ক্যাপসিকাম কুচি এবং এটি শরীরের জন্য বেশ কার্যকর।

কচি বাঁধাকপি

কাঁচা ও কচি সিদ্ধ বাঁধাকপিতে ভিটামিন “সি” ৪৮মিলিগ্রাম রয়েছে। যা শরীরের জন্য খুবই কার্যকারী।

ব্রকোলি

ব্রকোলি খুব কম দেখা যায় তবে এটিতেও ভিটামিন “সি” আছে এবং আধা কাপ সিদ্ধ ব্রকোলিতে ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ প্রায় ৫১ গ্রাম।

স্ট্রবেরি

স্ট্রবেরি খুব পরিচিত একটি ফল এটি খেতে বেশ মজাদার ও সুস্বাদু। স্ট্রবেরিতে প্রচুর ভিটামিন “সি” বিদ্যমান এবং আধা কাপ স্ট্রবেরিতে ভিটামিন “সি” ৪২ মিলি গ্রাম আছে। 

সবুজ ক্যাপসিকাম

কাঁচা ক্যাপসিকামে যেমন ৯৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি’ থাকে তেমনি সবুজ ক্যাপসিকাম কুচিতে থাকে ৬০ মিলি গ্রাম।

পেয়ারা

পেয়ারা একটি সুস্বাদু ফল,পেয়ারাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন “সি” রয়েছে শুধু তাই নয় প্রত্যেকটা পেয়ারাতেই ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ প্রায় ১২৫ গ্রাম। তাছাড়া পেয়ারা কমলালেবু চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কার্যকরী।

এছাড়াও টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। তাই টক খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে টক জাতীয় ফল গুলো বেশি শীতকালে পাওয়া যায়। যেহেতু টক ফলে ভিটামিন রয়েছে তািই সুযোগ পেলেই খাওয়া দরকার। চলুন জেনে নেই টক ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

আমলকি

আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা আমাদের চুল,ত্বক ও দাঁতের জন্য খুবই কার্যকর। তাছাড়া রক্ত সল্পতা,বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য,মাথা ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকিতে কমলালেবুর তুলনায় ২০ গুণ ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। আমলকি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
চুল পড়া রোধে আমলকির ব্যবহার

জলপাই

মূলত জলপাই শীতকালীন ফল। এই ফল শীতকালে বাজারে দেখা যায়। জলপাই এ অধিক পরিমাণে রয়েছে লৌহ, অসম্পৃক্ত চর্বি, ভিটামিন সি ও ই। যা মানব দেহের স্থুলতা হ্রাস করে এবং উপকারি চর্বি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি হাপানি ও বাতের ব্যথায় বেশ কার্যকারী। জলপাই কোলন ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে এই অলিভ অয়েল বেশ ভূমিকা পালন করে এবং হৃদপিন্ডেরর জন্যও উপকারী। জলপাইয়ের আচার বানিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষষণ করে রাখলে শীতের মৌসুম ছাড়াও বারো মাস খাওয়া যায়।

বরই

কুল বা বরই সুপরিচিত একটি ফল, এটি শীতকালীন ফল। বরই বাতের ব্যথা সারাতে, কোলন ক্যান্সার দূর করতে ও হাঁপানি ভালো করে বেশ কার্যকর। এই ফলে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ভিটামিন এ এবং সি সহ বিভিন্ন কিছু উপস্থিত রয়েছে। পাকা বরই এ চিনি যুক্ত থাকে তাই এটি প্রত্যেকের জন্য ভালো হলেও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো নয়, তবে কাঁচা বরই খেতে পারেন। বরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বরই একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ ফল।

এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় খাবার সম্পর্কে জানলাম। এর বাইরেও অনেক খাবার আছে যে গুলোতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে সেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত কার্যকর ও প্রয়োজনীয়। এসব খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাই এগুলো আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *