বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ক্রেডিট কার্ড এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারেন এবং সর্বোচ্চ ধারের পরিমান আপনার মাসিক আয়ের উপর নির্ভর করে ব্যাংক লিমিট করে দেয়। আপনার যদি মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা হয় তাহলে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লিমিটের একটি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন এবং যে ব্যাংক থেকে আপনি ক্রেডিট কার্ড নিবেন সেই ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী ক্রেডিট লিমিট কম-বেশি হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি কোন পেমেন্ট, শপিং মল এবং অনলাইর কাজে লাগাতে পারেন। আবার ক্রেডিট কার্ডকে আপনি আপনার নগদ টাকার বিকল্পও ভাবতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডের দ্বারা পেমেন্ট সাইট ও ডিজিটাল শপিং সেন্টার গুলোতে আপনি খুব সহজেই লেনদেন করতে পারেন।
বিষয় বস্তুসমূহঃ
ক্রেডিট কার্ড কি
ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের চিপ ভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থার অংশ বা প্লাস্টিক কার্ড, যেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারির নাম, কার্ড গ্রহণকারির স্বাক্ষর, কাস্টমার সেন্টারের বিবরণ, সিভিভি, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি সব তথ্য দেয়া থাকে। এই কার্ড মূলত কার্ড গ্রহণকারির অর্থ ব্যয়ের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এই কার্ডের কাজ হলো ব্যবহারকারির বাকিতে লেনদেন করার সার্ভিস দেয়া এবং ব্যবহারকারি কোন অর্থ প্রদানের জন্য কার্ড ব্যবহার করেন তখন ওই অর্থ কারেন্ট একাউন্ট/ সেভিংস থেকে না কেটে কার্ড ইস্যুকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বাকিতে আপনাকে লেনদেনের সার্ভিস দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে পূর্বেই নির্ধারণ করে দেয়া ক্রেডিট লিমিট রয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লেনদেনের পর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আর কেনাকাটা করা সম্ভব নয়। তবে কার্ডের বিল পরিশোধ করার পর আবার আগের মতোই ব্যবহার করা যায়।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা
বর্তমানে আর্থিক লেনদেনে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট-বড় যেকোন প্রকার কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যায়, তবে বড় ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড বেশ কাজে আসে। কারো কারো ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মনের ভিতর একপ্রকার ভয় কাজ করে। তারা ভাবে যে ক্রেডিট কার্ড আবার ব্যায়ের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নিম্নে আলোচনা করা হলো
দ্রুত লেনদেন
আপনি যদি দামি কোন জিনিস ক্রয় করতে চান এমন অবস্থায় এক সাথে এতো টাকা ব্যবস্থা করতে পারছেন না বা কারো কাছে এতো অল্প সময়ে ধার করতেও পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং এই সময় ক্রেডিট কার্ড বেশ কাজে দেয়। ক্রেডিট কার্ডের দ্বারা আপনার পছন্দের পণ্যটি তাড়াতাড়ি ক্রয় করে কয়েক মাসে টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। এর ফলে ঋণের বোঝাও আপনার হালকা হবে এবং সময়সীমা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া হয়তো জরিমানা দিতে হতে পারে।
অধিকতর নিরাপত্তা
চুরি, প্রতারণা বা একই খরচ বারবার হতে পারে। এই দিকগুলো বিবেচনা করে ক্রেডিট কার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনেক বেশি। এছাড়াও যদি কোন কারণে ক্রেডিট কার্ড চুরি হয়ে যায়, চুরি হওয়ার পর যদি ওই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা হয় তার দায়ভার আপনার একেবারে নেই।
পুরষ্কার পয়েন্ট
আকাশপথে বিনামূল্যে ভ্রমণ, মূল্য ফেরত পয়েন্ট অথবা অতিরিক্ত পুরস্কার পয়েন্ট হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড এর অন্যতম কিছু আকর্ষণীয় বিষয়। যে গুলো মূলত ক্রেডিট কার্ডের দ্বারা লেনদেন করলে এইসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এই সমস্ত পুরস্কার পয়েন্ট পরে কাজে লাগানো সম্ভব এবং সহজেই কাজে লাগানো যায়।
ঋণের সুবিধা
কিছু কিছু ক্রেডিট কার্ড বিশেষ করে বিদেশে শূণ্য শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে থাকে এবং এমন অবস্থায় মাসের শেষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের মূল্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীকে পরিশোধ করে দিতে হয়, যেটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর জন্য বেশ সুবিধাজনক। আবার কোন কার্ডে ঋণে সুদের হার বেশি হয়ে থাকে। এটারও একটা সুবিধা রয়েছে সেটা হচ্ছে ঋণ দ্রুত পরিশোধ করা হয় এবং ঋণ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যায়।
ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি
আপনার লেনদেন যদি খুব একটা ভালো বা সুখকর না হয়, সেক্ষেত্রে ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হলো ক্রেডিট কার্ড নিয়মিত ব্যবহার করা এবং নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যথাসময়ে বিল পরিশোধ করলে ক্রেডিট কার্ডের স্কোর খুব তাড়াতাড়ি বাড়বে।
ব্যয়ের সঙ্গে আয়
ক্রেডিট কার্ডে অনেক রকম অফার দেয়া হয়ে থাকে। যেমন- Special discount, Cash back offer এবং আপনি দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে যান আর সেখানে যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও অনেক সময় মূল্যছাড় দেয়। আর এই ক্রেডিট দিয়ে প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় বিশেষ মূল্যছাড় দেয়।
সুরক্ষা
চেক, নগদ, ডেবিট কার্ড ব্যবহারের থেকে সব থেকে বেশি নিরাপদ হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। কোন কারণে আপনার কার্ড যদি চুরি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডে থাকা সমস্ত টাকা ফেরত পাবেন। আর কার্ড চুরি হওয়ার পর যদি কার্ড থেকে কেউ টাকা তোলে তাহলে কার্ড প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠান সমস্ত অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। সঠিক প্রমাণ দিলে যত দ্রুত সম্ভব অর্থ ফেরত পাওয়া যায় এবং আপনাকে অবশ্যই কার্ডের নম্বর মনে রাখতে হবে।
পরিবর্তনযোগ্য
মনে করেন আপনি কার্ড অফারে নিয়েছেন। কার্ডটি ব্যবহারে যদি আপনার ঋণের বোঝা বেশি মনে হয়, তাহলে কার্ডটি পরিবর্তন করে আবার অন্য নতুন একটি কার্ড নেয়া যায় এবং পূর্বের কার্ডের মতো সহজেই ব্যবহার করা যায়। সেই ক্ষেত্রে আপনার হয়তো কিছু পরিমাণ টাকা বেশি লাগতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে অসুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো
বার্ষিক সুদ
বেশিভাগ ক্রেডিট কার্ডে বার্ষিক সুদ দিতে হয়। কিছু পরিমাণ ফি প্রযোয্য হয়ে থাকে। যেমন- Balance transfer fee, দেরিতে পরিশোধের ফি, ওভারড্রাফট ফি ইত্যাদি।
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে
লুকায়িত ব্যয়
ক্রেডিট কার্ডে শুধুমাত্র যে ব্যয়ে সুদের হার পরিশোধ করা নয়। বরং আপনি যদি যথাসময়ে মাসিক ফি পরিশোধ করতে না পারেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই জরিমানা দিতে হবে।
অধিক চার্জ
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হোক অথবা না হোক কার্ড যতক্ষণ পর্যন্ত চালু থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত বার্ষিক চার্জ দিতে হবে এবং এটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একটি অন্যতম অসুবিধা বলে বিবেচিত করা হয়েছে। তাছাড়া ক্রেডিট ব্যবহার না করা হলেও বার্ষিক চার্জ প্রদান করা অবশ্যই বাধ্যতামূলক।
আর্থিক চাপ
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে প্রতিমাসে বা বার্ষিক সুদ দিতে হয়। যা মূল ঋণ পরিশোধের একটি চাপ থাকে এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে এই চাপটি থাকতো না। যেটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একটি অসুবিধা।
অতিরিক্ত খরচ
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের কারণে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলাফল অতিরিক্ত ব্যয়। কার্ড ব্যবহার করলে বিভিন্ন প্রকার অনলাইন সাইট পেমেন্টসহ সাবস্ক্রিপশন অনায়সে করা যায় যা অপ্রয়োজনীয় কোন কিছুর দিকে ঝোক বৃদ্ধি করতে পারে। আবার বড় বড় শপিং মলে পেমেন্ট এর জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহৃত হয় এবং যার কারণে খরচ বাড়তে পারে ইত্যাদি। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে এ রকম আরো অনেক কারণে আপনার অর্থ ব্যয় হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড করার নিয়ম
ক্রেডিট কার্ড এমন এক প্রকার কার্ড যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার নামে ডিপোজিট থাকে এবং সেই অর্থ আপনি আপনার ইচ্ছা মতো নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ অনায়াসে করতে পারেন। পরে আপনার ব্যাংক একাউন্টে সেই অর্থ জমা করতে হবে।
ক্রেডিট কার্ডে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে বর্তমানে সবাই ক্রেডিট কার্ড সুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহী। ব্যাংক একাউন্টের অর্থের উপর ভিত্তি করে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনার ক্রেডিট কার্ড একাউন্টে নির্দিষ্ট লিমিটের উপর নির্ভর করে আপনার খরচ করা উত্তম। কারণ কিন্তু নির্দিষ্ট লিমিটের চেয়ে অত্যাধিক অর্থ ব্যয় করলে আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন প্রকার বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার।
কিভাবে ক্রেডিট কার্ড তৈরি করা যায় এখন তা জানা যাক –
- ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে হলে সর্বপ্রথম আপনার একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
- একটি ব্যাংক একাউন্ট করার জন্য আপনাকে যে সমস্ত জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে তা হচ্ছে-
- ড্রাইভিং লাইসেন্স/NID কার্ড।
- পাসপোর্ট সাইজের আপনার ২ কপি ছবি।
- নমিনির আইডি কার্ড।
- নমিনির স্বাক্ষর।
- পুরাতন ব্যাংক হিসাব পত্র।
- নমিনির ছবি।
- কোন Bank থেকে আপনার ব্যক্তিগত একটা ব্যাংক একাউন্ট খোলার পরে সেই একাউন্টে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা জমা করে রাখতে হবে।
- Bank Account এ পরিমিত পরিমাণ টাকা জমা হওয়ার পর আপনি যদি জানতে চান যে কিভাবে ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে হয় তা জানতে হলে অবশ্যই আপনার যেখানে ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট যেতে হবে, তাহলে আপনি সমস্ত ডিটেলস জানতে পারবেন।
- এছাড়াও আপনার আয় রোজগারের উৎস, ব্যাংক একাউন্টের হিসাব সঠিকভাবে যাচাই করে দেখা হবে যে আপনি ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্য কিনা।
- ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই ক্রেডিট কার্ডের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন।
এই আর্টিকেলে সুন্দরভাবে ক্রেডিট কি, কার্ড করার নিয়ম ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের কাজে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জরুরি প্রয়োজনে কাছে অর্থ না থাকলে ক্রেডিট কার্ড কাজে লাগানো যায়।
বন্ধুরা ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে চাইলে নিচের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।