ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় ও বিনিয়োগের উপায়

ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করে মিলিয়নিয়ার হয়ে যাওয়ার গল্প আমরা অনেক শুনে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই পথ পাড়ি দেওয়া স্বপ্নের মতো সহজ কিছু নয়। ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য কাজের মতো এটিও শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। বরং ঝুঁকির আশংকা তুলনামূলক বেশিই বলা যেতে পারে।

কেননা এখানে আপনাকে সময় ও অর্থ উভয়ই বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেটি অবশ্যই সঠিক উপায়ে। তবেই না আপনি আশানুরূপ আয়ের মুখ দেখবেন। 

ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করতে হলে প্রথমত আমাদের জানতে হবে কিভাবে ক্রিপ্টো মুদ্রার মাধ্যমে আয় করা যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই ক্রিপ্টোকয়েনের মাধ্যমে আয় করার উপায়গুলো কি কি।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার সবথেকে সহজ উপায়টি হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ইন্টারনেটে সার্চ করলে আপনি এরূপ অনেক ই-কমার্স কোম্পানি পেয়ে যাবেন যারা মূলত বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে। এসব প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন ডিজিটাল কারেন্সি উপার্জন করা যায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং

ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং। অর্থ্যাৎ অফলাইনে যেরকম বিভিন্ন পণ্য ট্রেড করে অর্থ উপার্জন করা হয়, তেমনি অনলাইনেও ক্রিপ্টোকয়েন ট্রেড করার মাধ্যমে ইনকাম করা সম্ভব।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং মানে হলো বাজারে যখন একটি মুদ্রার দাম কম থাকে তখন সেই মুদ্রাটি ক্রয় করে পরবর্তীতে যখন ঐ মুদ্রার দাম বৃদ্ধি পায় তখন সেটি আবার বিক্রি করে দেওয়া। তবে এই কাজটিকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে এটি কিন্তু ঠিক ততটাও সহজ নয়। 

এর জন্য প্রয়োজন অনেক দক্ষতা, সময় ও শ্রম। আপনি যখন এই ফিল্ডে লেনদেন করতে কিছুটা দক্ষতা অর্জন করবেন এবং প্রফেশনালি কাজ করতে চাইবেন তখন এই পদ্ধতি আপনার জন্য অন্যতম সেরা ও লাভজনক একটি উপায় হতে পারে।

শপিং রিওয়ার্ড

ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেতাদের শপিং রিওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক কালের জনপ্রিয় কয়েকটি  ক্রিপ্টো শপিং রিওয়ার্ড ই-কমার্স সাইটের নাম হলো Lolli, CoinCorner, Gemini, Wirex প্রভৃতি। এই শপিং রিওয়ার্ডগুলো মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে।

এভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার জন্য গ্রাহকের ব্রাউজারে একটি এক্সটেনশন ডাউনলোড করা থাকতে হবে। এরপর প্রোডাক্ট চেক আউট করার করার সময় ঐ এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে ক্রয়মূল্যের উপর প্রায় 30% ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। যার সম্পূর্ণটাই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেওয়া হয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং

প্রফেশনালভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার প্রধান উপায়টি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং। ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ক্রিপ্টোকয়েন আর্নিং-কেই মূলত ক্রিপ্টোকয়েন মাইনিং বলা হয়। আর যিনি মাইনিং করে উপার্জন করেন তাকে বলা হয় মাইনার।

এক্ষেত্রে একজন মাইনারের কাজ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির পাবলিক লেজারে একটি লেনদেনের হিসাব আপডেট করে রাখা। অর্থ্যাৎ নতুন নতুন ব্লক তৈরি করে সেই ব্লকগুলো পূর্ববর্তী ব্লকের সঙ্গে যুক্ত করে ব্লকচেইন তৈরি করা।

ব্লকচেইন তৈরির এই কাজটি এক ধরনের বিশেষ কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে যাকে মাইনিং রিগস বলা হয়। মাইনিং রিগ দিয়ে মাইনাররা অনেক দ্রুত বিভিন্ন ধরনের কয়েন মাইন করতে পারেন এবং এভাবে খুব কম সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণ কারেন্সি উৎপাদন করতে পারেন। 

সার্ভে করে ক্রিপ্টোকারেন্সি আর্নিং

সহজে ও বিনামূল্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম হলো বিভিন্ন অনলাইন রিসার্চ কোম্পানির সার্ভেতে অংশগ্রহণ করা। এই কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভেতে অংশগ্রহণ করা কর্মীদের ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে রিওয়ার্ড দিয়ে থাকে এবং এভাবে বিনামূল্যে ক্রিপ্টোকয়েন আয় করা সম্ভব।

এরূপ জনপ্রিয় কয়েকটি সার্ভে ওয়েবসাইটের নাম হলো Survey Time, Bitcoin Rewards, TimeBucks, Cointiply প্রভৃতি। প্রথমে এসব ওয়েবসাইটে ঢুকে ফ্রিতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন সার্ভেতে অংশগ্রহণ করে কারেন্সি উপার্জন করতে হবে। এভাবে যত বেশি সার্ভে করবেন তত বেশি কারেন্সি লাভ করতে পারবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ

সাম্প্রতিককালে ভার্চুয়াল জগতে যে কয়েকটি বিনিয়োগক্ষেত্র সারা বিশ্বজুড়ে সারা ফেলেছে তন্মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছে এমনকি শূন্য থেকে মিলিয়নিয়ার বনে গিয়েছেন এমন সফলতার গল্পও নেট দুনিয়ায় কান পাতলেই শোনা যায়। 

তবে এতসব সফলতার গল্পের পেছনে লুকিয়ে থাকা, অন্ধকারে ঢেকে থাকা অসফলতা ও হতাশার গল্পও নিতান্ত কম নয়। তাই এই অদৃশ্য জগতে আপনার মূল্যবান অর্থ বিনিয়োগের পূর্বে একবার নয় দশবার নয় বরং শতবার ভাববেন এবং এরপর সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সঠিক পথটি বেছে নিবেন। আর এক্ষেত্রে যত বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন তত বেশি সফল হবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে হলে বা ক্রিপ্টোকয়েন কিনতে হলে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অনুসরণ করতে হবে যেগুলো আমরা এ পর্যায়ে বিষদভাবে আলোচনা করতে চলেছি।

১. ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের সর্বপ্রথম ধাপটি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে সাইন আপ বা রেজিস্ট্রেশন করা। ইন্টারনেটে বর্তমানে অনেক রকমের ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ সফ্টওয়্যার রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী এদের মধ্য থেকে যেকোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।

তবে অফলাইনের তুলনায় অনলাইনে নিরাপত্তা যেহেতু অনেক বড় একটি প্রশ্ন তাই এক্ষেত্রেও একজন বিনিয়োগকারীকে অনেক সচেতন হতে হবে। যেনতেন সফটওয়্যার ব্যবহার না করে কিছুটা সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে সবথেকে নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য ও সহজে ব্যবহার করা যায় এমন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বেছে নিতে হবে। 

যেমন- CoinDEX, Coinbase, Coinswitch Kuber, Binance, eToro, Bitfinex, Bittrex, Kraken প্রভৃতি। 

এগুলো হলো বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ সফটওয়্যার। এছাড়া এদের নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ্লিকেশন থাকার কারণে এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস থাকার কারণে নতুনদের জন্য খুবই সহজে ব্যবহারযোগ্য।

এসব প্লাটফর্মে মিনিমাম 20$-50$ বিনিয়োগ করেও আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে ন্যূনতম 100$ ইনভেস্ট করে ব্যবসা শুরু করাই সবথেকে ভালো। এই প্লাটফর্মগুলোর প্রত্যেকটিই নিজ নিজ জায়গা থেকে অসম্ভব ভালো। 

তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো Binance প্লাটফর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন। এখানে সামান্য শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করেই লাভবান হতে পারেন। এছাড়া এটি খুবই বিশ্বস্ত একটি প্লাটফর্ম। পাশাপাশি এখানে বিগিনার ও এডভান্স লেভেলের কর্মীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সেক্টর। যেটি নিঃসন্দেহে খুবই ফলদায়ক।

২. ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করা হয়ে গেলে এ পর্যায়ে এই অ্যাকাউন্টকে একটি পেমেন্ট মাধ্যমের সাথে যুক্ত করুন। সেটি হতে পারে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড।

৩. পেমেন্ট মেথড যুক্ত হয়ে গেলে এবার আপনি ক্রিপ্টোকয়েন কিনতে অর্থাৎ বিনিয়োগ করতে পুরোপুরি তৈরি। এবার আপনি আপনার বাছাইকৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জটির মাধ্যমে ন্যূনতম ১০০ ডলার খরচ করে ক্রিপ্টো মুদ্রা ক্রয় করতে পারেন। 

কিন্তু এ ধরনের ক্রিপ্টো বা গুপ্ত মুদ্রা ক্রয় করার পরে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এগুলো আপনি কোথায় সংরক্ষণ করবেন বা জমা রাখবেন। যেহেতু এগুলো এক রকমের অদৃশ্য মুদ্রা যা আমরা দেখতে পাইনা বা স্পর্শ করতে পারিনা, সেহেতু সাধারণ টাকার মতো ক্রিপ্টো মুদ্রা ব্যাংকে অথবা ওয়ালেটে জমা রাখতে পারবো না।

তো এক্ষেত্রে সবথেকে মজার বিষয়টি হলো এগুলো যে রকম অদৃশ্য মুদ্রা তেমনি এগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্যও রয়েছে অদৃশ্য ওয়ালেটে। এই ওয়ালেটে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে নিরাপদে ক্রিপ্টোকয়েন জমা রাখা যায় এবং ক্রয়-বিক্রয় করা যায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি তালিকা

বিটকয়েন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০০ টির বেশি সংখ্যক ক্রিপ্টোকয়েনের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে এদের বেশিরভাগই নেট দুনিয়ায় আশানুরূপ সারা ফেলতে পারে নি। এযাবতকালের জনপ্রিয় ও শীর্ষ ১০টি ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো:

1.Bitcoin (BTC)

2. Ethereum (ETH)

3. Cardano (ADA)

4. Binance Coin (BNB)

5. Dogecoin (DOGE)

6. USD Coin (USDC)

7. Ripple (XRP)

8. Solana (SOL)

9. Polkadot (DOT)

10. Tether (USDT)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *