ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা ও ব্যবহার

অ্যালোভেরা বর্তমানে বাংলাদেশের সব স্থানে পাওয়া যায়। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের সব জায়গায় পাওয়া যায়। অ্যালোভেরাকে বাংলায় ঘৃতকুমারী বলে। এটি ঘৃতকুমারীর চেয়ে অ্যালোভেরা নামে বেশি পরিচিত। অ্যালোভেরা ওষুধ হিসেবে যেমন কাজ করে তেমনি ত্বক ও চুলের কাজ করে। ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, রোদে পোড়া ভাব দূর করে, ত্বক মসৃণ করে, দাগ মুক্ত করে এবং ত্বকের ব্রণ দূর করে। যাদের ত্বক অধিক সংবেদনশীল তারা নানান রকম কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান ব্যবহার না করে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার নানান ব্যবহার। 

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা

পরিমাণ মত হলুদের গুঁড়া ও এক চা চামচ খাঁটি মধু এবং অ্যালোভেরা জেল ভালো ভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মিশ্রিত পেস্ট মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে হাত ও পায়েও এই পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বক পেতে চাইলে পেষ্টগুলোকে মাস্ক এর মতো করে সপ্তাহে এক-দুই ব্যবহার পারেন। এতে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে, বলিরেখা চলে যাবে। প্রতিদিন অ্যালোভেরা মুখে লাগালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ত্বক উজ্জ্বল এবং সফট করতে সাহায্য করবে। অ্যালোভেরার সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

অ্যালোভেরা রোদে পোড়া ভাব কমায়

দুই-একটি কাঁচা টমেটোর মাঝখানের শাঁস বা নরম অংশ বের করে নিন। তারপর মসুর ডালের পাউডার এর সাথে অ্যালোভেরা জেল, টমেটোর শাঁস একত্রে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। পেস্ট বানানো হয়ে গেলে মুখে গলায় ভালো ভাবে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দেয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে ফেলুন।
চাইলে পেস্টগুলো হাত পায়ে লাগাতে পারেন। তবে সবার ত্বক যেহেতু এক রকম না সে জন্য যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মুখ ধোয়ার পর ভেজা ত্বকেই কয়েক ফোটা কাঁচা দুধ ও নারকেলের তেল লাগিয়ে নিতে পারেন। কেননা এতে করে আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজার থাকবে এবং ত্বক গ্লো করবে।
আবার অ্যালোভেরার জেল এর সাথে টাটকা শসার পেস্ট, খাঁটি মধু ও টক দই মিশিয়ে সুন্দর করে মাস্ক বানিয়ে নিন। এরপর মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে পেস্টগুলো মাস্ক এর মতো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি ব্যবহার করার ফলে রোদে পোড়া ভাব দূর হতে সহায়তা করে। আবার ব্রণের দাগ অনেকটা হালকা করতে সাহায্য করে। আপনার ত্বককে এটি গ্লো করবে, পরিষ্কার করবে, ত্বকের সমস্যা দূর করবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

দাগ মুক্ত করতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা দাগ মুক্ত করতে খুবই উপকারী। অ্যালোভেরার দুই পাশের অংশ কেটে ফেলে দিয়ে ভিতরের অংশ বের করে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পরিমাণ মতো লেবুর রস নিয়ে এর সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন।
পেস্ট তৈরি করা হয়ে গেলে মুখ, গলা হাত পায়ের রং হালকা উজ্জ্বল ও দাগ দূর করতে প্রতিদিন লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট আপনার দাগ মুক্ত করতে সহায়তা করবে। আপনি চাইলে পেস্ট তৈরি ফ্রিজে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেলের সাথে মধু, মুলতানি মাটি, লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরী করুন। মুখের সাথে সাথে গলাও পরিষ্কার হওয়া জরুরী। তাই মুখে ও গলায় পেস্টি লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই পেষ্টটি সপ্তাহে দুই একবার ত্বকে লাগালে আপনার মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কেটে যাবে।

মেছতা দূর করতে অ্যালোভেরা

মেছতা দূর করতে অ্যালোভেরা জেল খুবই কার্যকারী। আপনার আঙ্গুলের ডগায় পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে দাগের উপরে আসতে আসতে মেসাজ করুন। রাতে শোয়ার আগে লাগিয়ে নিন। তারপর সারারাত রেখে দিয়ে পরের দিন সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে দিন। এই পদ্ধতিতে কয়েক সপ্তাহ এই পেষ্ট ব্যবহার করলে মেছতার দাগ কমে তো যাবেই সেই সাথে আপনাকে দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগবে। শসা, অ্যালোভেরা, মধু এক সঙ্গে পেস্ট করে মুখে লাগালে মেছতার দাগ হওয়ার পাশাপাশি ত্বক সফট, সতেজ ও উজ্জ্বল হবে। এ ছাড়া গাজর সিদ্ধ ও অ্যালোভেরা এক সাথে পেস্ট করে লাগালেও মেছতা চলে যায়।

ত্বক সতেজ রাখতে অ্যালোভেরা

একটি ডিমের সাদা অংশ এক চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস এক সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে গলা সহ পুরো মুখে লাগান। যখন শুকিয়ে আসবে তখন হালকা গরম পানি দিয়ে সুন্দর ভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক সতেজ থাকবে। এই পেস্ট ত্বক সতেজ রাখতে দারুন কাজ করে। 

বলিরেখা দূর করতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। অ্যালোভেরার রস ত্বকের বলিরেখা দূর করতে দারুন কাজ করে। চালের গুঁড়ো, মধু, শুকনো কমলা লেবুর খোসার গুঁড়ো, অ্যালোভেরা এবং তুলসি পাতার মিশ্রণের সাথে সুন্দর করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি তৈরি হয়ে গেলে ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন এবং যখন শুকিয়ে যাবে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করবে। 

ব্রণের দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা

ব্রণ কম বেশি সবার হয়ে থাকে, অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ ব্রণ সারাতে এবং নতুন কোষ জন্মাতে অধিক কার্যকারী। অ্যালোভেরা জেল আইস কিউব ট্রেতে করে অ্যালোভেরা আইস কিউব তৈরি করে প্রতিদিন ব্রণের উপর দিনে তিন চারবার ঘষলে ব্রণের সমস্যা সমাধান হবে।

ঠোঁটের যত্নে অ্যালোভেরা

বিভিন্ন কারণে ঠোঁটের সমস্যা দেখা দেয়। ঠোঁট ভালো রাখতে, ঠোঁটের রং উজ্জ্বল রাখতে এবং ঠোঁট মসৃণ ও নরম করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার যায়। অ্যালেভেরা জেল নিয়মিত লাগালে ঠোঁট ইজ্জ্বল হয় এবং অ্যালোভেরা জেল ও এক টেবিল চা-চামচ চালের গুঁড়ো দিয়ে প্যাক তৈরি করে ঠোঁটে এই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে মেসাজ করে ৫-৭ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ঠোঁট উজ্জ্বল কোমল ও মসৃণ হয়ে উঠেছে। 

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা

নিত্য নতুন প্রয়োজনে নানা কাজের জন্য সকলকে বাহিরে যেতে হয়। বাহিরে বের হলে চুলে ধুলা বালি জমে। যার ফলে চুলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চুল পড়তে শুরু করে, খুশকি হয়, তাই চুলের যত্ন নেয়া খুব জরুরী। অ্যালোভেরা জেল রাতে লাগিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে পারলে চুল খুশকি মুক্ত হতে পারে।
লেবুর রস, নারকেলের দুধ, নারকেলের তেল অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল সুন্দর ও সতেজ থাকতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরা জেল মাথার তালু বা চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেসাজ করুন এবং দুই তিন ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন নিয়মিত মেসাজ করলে চুল পড়া বন্ধ হতে সহায়তা করবে, সেই সাথে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। অপনার বাড়িতে যদি অ্যালোভেরার গাছ না থাকে তাহলে বাজারের অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।

ডিম, টক দই ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বাড়িতেই হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন এবং এই প্যাকটা ব্যবহারে চুল দ্রুত বড় হবে। অ্যালোভেরা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া যায় তাহলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সরাসরি যদি গাছ থেকে অ্যালোভেরা সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে সবচেয়ে বেশি ও ভালো ফলাফল পাবেন। অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া, পটাশিয়াম ইত্যাদির মত ওষুধি গুণ রয়েছে। যা আমাদের দেহকে রোগ মুক্ত রাখে এবং এই উপাদান গুলো খুবই উপকারী। ভিটামিন ই-ক্যাপসুল এর সাথে অ্যালোভরা মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে মোটামুটি ভালো ফলাফল পাবেন। অ্যালোভেরার রস খেলে পাকস্থলী ভালো থাকে এবং শরীর ঠান্ডা রাখে ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *