প্রিপেইড মিটার হলো বিশেষ এক ধরনের বৈদ্যুতিক মিটার যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হলে প্রথমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী বিদ্যুতের সার্ভিস গ্রহণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের মোবাইলে যে রকম আগে টাকা রিচার্জ করতে হয় এবং পরে সেই টাকা খরচ করে কথা বলতে হয়। ঠিক তেমনি ডিজিটাল প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটারে প্রথমে টাকা রিচার্জ করতে হয়, এরপর সেই টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়।
অর্থ্যৎ মোবাইলে টাকা না থাকলে আমরা যেমন কাউকে কল করতে পারিনা বা কথা বলতে পারিনা, তেমনি ডিজিটাল মিটারে যদি ব্যালেন্স না থাকে তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পুনরায় মিটার রিচার্জ করা না হবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায়েই থাকবে।
বাংলাদেশের পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিগুলো প্রতি বছর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার একটি বৃহৎ অংশ বিভিন্ন কারণে অপচয় হয় এবং নষ্ট হয়ে যায়। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, অ-প্রযুক্তিগত লাইন ট্রান্সমিশন, বিল বকেয়া এবং জরিমানা আদান-প্রদানের ন্যায় বিরক্তিকর এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তোরণের জন্য যে পদ্ধতিটি শতভাগ ভোক্তাবান্ধব এবং সাশ্রয়ী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে সেটি হলো প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেম (Prepaid Metering System). এই সিস্টেমের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সাল থেকে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ শহরাঞ্চলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
বিষয় বস্তুসমূহঃ
প্রিপেইড মিটারের প্রকারভেদ
ডিজিটাল প্রিপেইড মিটারগুলো সাধারণত দুই ধরনের। যেমন
কিপ্যাড টাইপ প্রিপেইড মিটার
এ ধরনের প্রি-পেমেন্ট মিটারগুলো বোতাম টিপে অপারেট করতে হয় এবং কোন তথ্য জানতে হলে নির্ধারিত কোড নাম্বার ডায়াল করে জানতে হয়। কিপ্যাড ধরনের যেকোন ডিজিটাল মিটার ভেন্ডিং স্টেশনের পাশাপাশি যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং সরাসরি ব্যাংক থেকেও রিচার্জ করা যায়। এ ধরনের ডিজিটাল বৈদ্যুতিক মিটার সমূহ দুই ধরনের টেকনোলজিতে পাওয়া যায়। যেমন: ইউনিট ট্রান্সফার সিস্টেম এবং কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম।
স্মার্ট কার্ড টাইপ প্রিপেইড মিটার
স্মার্ট কার্ড টাইপ প্রিপেইড মিটার অপারেট করার জন্য এতে একটিমাত্র স্ক্রল বোতাম এবং একটি স্মার্ট কার্ড রয়েছে। এতে যেকোন ইনফরমেশন জানতে হলে স্ক্রল বোতামটি পর্যায়ক্রমে পুশ করতে হয়। এ ধরনের মিটারগুলো শুধুমাত্র ভেন্ডিং স্টেশন যেয়েই রিচার্জ করানো সম্ভব। স্মার্ট কার্ড টাইপ প্রি-পেমেন্ট বৈদ্যুতিক মিটারের কেবল কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম টেকনোলজি রয়েছে।
প্রিপেইড মিটার ব্যালেন্স চেক
প্রিপেইড মিটার যদি কিপ্যাড টাইপের হয়ে থাকে তাহলে মিটারের ব্যালেন্স চেক করার জন্য সেটির ডায়াল প্যাড থেকে 801 কোডটি ডায়াল করুন এবং লাল রঙের বোতামটি চাপুন। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মিটারের ডিসপ্লেতে অবশিষ্ট ব্যালেন্সের পরিমাণ দেখা যাবে।
অন্যদিকে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটারটি যদি স্মার্ট কার্ড টাইপের হয় তাহলে, মিটারের C.51.0 চ্যানেল থেকে অবশিষ্ট ব্যালেন্স সম্পর্কে জানা যাবে।
ডেসকো প্রিপেইড মিটার ব্যালেন্স চেক
ডেসকো প্রিপেইড মিটারটি যদি স্মার্ট কার্ড নির্ভর হয়ে থাকে, তাহলে সেটির ব্যালেন্স চেক করার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- প্রথমে মিটারের স্মার্ট কার্ডটি উল্টোভাবে মিটারের কার্ড স্লটে প্রবেশ করাতে হবে।
- স্লটে স্মার্ট কার্ড ঢুকানো হলে মিটারের ডিসপ্লেতে Invalid Card লিখা প্রদর্শিত হবে এবং এ সময় কার্ডটি স্লট থেকে বের করে ফেলতে হবে।
- তাহলে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট মিটারের ডিসপ্লেতে মিটারের tariff তথ্যগুলো প্রদর্শিত হবে।
- এ পর্যায়ে ৪ নাম্বার সিরিয়ালে যে তথ্যটি দেখানো হবে সেটি-ই হলো ঐ মিটারে বিদ্যমান বর্তমান ব্যালেন্স।
আর যদি ডেসকো প্রিপেইড মিটারটি কিপ্যাড ধরনের হয় তাহলে এর ব্যালেন্স চেক করা আরও সহজ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মিটারে স্ক্রল বাটনটি পর্যায়ক্রমে পুশ করতে হবে। এভাবে পঞ্চম বার বাটন পুশ করা হলে ডিসপ্লেতে মিটারের অবশিষ্ট ব্যালেন্স দেখানো হবে।
নেসকো প্রিপেইড মিটার ব্যালেন্স চেক
কিপ্যাড টাইপ নেসকো প্রিপেইড মিটারের বর্তমান ব্যালেন্স চেক করার জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট মিটারের কিপ্যাড থেকে 37 ডায়াল করুন। এরপর এন্টার কি অর্থাৎ লাল রঙের বোতামটি চাপুন। তাহলেই মিটার এর ডিসপ্লেতে অবশিষ্ট ব্যালেন্স এর পরিমাণ ভেসে উঠবে।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ পদ্ধতি
বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই সময়মতো মিটার রিচার্জ করতে হবে। অর্থ্যাৎ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য প্রথমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে এবং এরপর আপনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিজিটাল প্রি-পেমেন্ট মিটারে বিদ্যুৎ বিল লোড করার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তবে এ ধরনের মিটারের প্রকারভেদ অনুযায়ী টাকা রিচার্জের পদ্ধতিগুলো ভিন্ন ভিন্ন।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম
কিপ্যাড টাইপ প্রিপেইড মিটার
কিপ্যাড টাইপ বৈদ্যুতিক মিটারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। যেমন- বিদ্যুৎ অফিস, ভেন্ডিং স্টেশন অথবা রিচার্জ সেন্টারে গিয়ে বিল রিচার্জ করা কিংবা যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং অথবা সরাসরি ব্যাংক থেকেও মিটারে টাকা রিচার্জ করতে পারবেন।
তবে আপনি যেকোন পদ্ধতিতে-ই মিটার রিচার্জ করেন না কেন সেক্ষেত্রে মিটারের সিরিয়াল নাম্বার জানতে হবে। মিটার নাম্বার ভুলে গেলে বা জানা না থাকলে, সংশ্লিষ্ট মিটারের ডায়াল প্যাড থেকে 804 ডায়াল করে এন্টার কি (লাল রঙের বোতামটি) চাপলেই মিটার নাম্বার দেখতে পাবেন।
এখন আপনি যদি বিদ্যুৎ অফিস বা রিচার্জ সেন্টার থেকে টাকা রিচার্জ করতে চান তাহলে সেখানে মিটার নাম্বার এবং যত টাকা রিচার্জ করতে চান তত টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাহলে তাঁরা আপনাকে বিশ ডিজিটের পিন সম্বলিত একটি টোকেন দিবে। এরপর সেই পিন নাম্বারটি সংশ্লিষ্ট মিটারে সঠিকভাবে ডায়াল করে এন্টার কি চাপলেই মিটারে নির্ধারিত টাকা রিচার্জ হয়ে যাবে।
আর যদি আপনি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মিটার রিচার্জ করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট মিটারের নাম্বার জানা থাকতে হবে। এরপর অ্যাপ থেকে নির্ধারিত টাকা লোড হয়ে গেলে এস.এম.এস. এর মাধ্যমে ২০ ডিজিটের পিন নাম্বারটি জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর পূর্বের ন্যায় সংশ্লিষ্ট মিটারের ঐ পিন নাম্বারটি ডায়াল করে লাল বোতাম চাপলেই প্রিপেইড মিটার রিচার্জ সম্পন্ন হবে।
স্মার্ট কার্ড টাইপ প্রিপেইড মিটার
এ ধরনের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে মিটারের স্মার্ট কার্ডটি ভেন্ডিং স্টেশনে নিয়ে যেয়ে রিচার্জ করিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই স্মার্ট কার্ডটি সংশ্লিষ্ট মিটারের নির্ধারিত স্থানে পাঞ্চ করলে রিচার্জ সম্পন্ন হবে।
নেসকো প্রিপেইড মিটার রিচার্জ
প্রচলিত বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস (যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে নেসকো প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যায়। আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে রিচার্জ করতে চান তাহলে প্রথমে আপনার মোবাইলে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করা থাকতে হবে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিপেইড মিটারের সিরিয়াল নাম্বার এবং প্রদত্ত মোবাইলটির মোবাইল নাম্বার জানা থাকতে হবে।
তাহলে বিকাশ অ্যাপ থেকে সহজে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মিটারে নির্ধারিত অ্যামাউন্টের বিল সংযোজন করা যাবে। এক্ষেত্রে অ্যাপ থেকে বিল রিচার্জ করা হলে প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে 20 ডিজিটের একটি পিন নাম্বার এস.এম.এস এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। এরপর সেই নাম্বারটি মিটারের কিপ্যাড থেকে ডায়াল করে এন্টার দিলেই রিচার্জ সম্পন্ন হবে। এছাড়া এক্ষেত্রে কিছু সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়া হবে।
প্রিপেইড মিটার ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স আনার নিয়ম
প্রিপেইড মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স আনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়।
নেসকো প্রিপেইড মিটারে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স আনার জন্য মিটারের কিপ্যাড থেকে 99999 কোড নাম্বারটি ডায়াল করে এন্টার কি চাপলেই ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স মিটারে লোড হয়ে যাবে।
আর যদি আপনি ডেসকো কিপ্যাড টাইপ মিটার ব্যবহার করেন তাহলে সেক্ষেত্রে 811 কোড নাম্বারটি ডায়াল করলেই মিটারে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু হবে।
প্রিপেইড মিটারের সকল কোড
এ পর্যায়ে কিপ্যাড টাইপ ডিজিটাল বৈদ্যুতিক প্রি-পেইড মিটারের প্রয়োজনীয় সকল কোড ও তাদের ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো। Hexing Electrical Company Ltd. কর্তৃক সরবরাহকৃত কিপ্যাড টাইপ প্রি-পেমেন্ট মিটারে কোন তথ্য খুঁজে বের করতে নির্ধারিত কোডটি ডায়াল করে এন্টার কি (লাল রঙের বোতাম) চাপতে হবে।
যা জানতে পারবেন | কোড নাম্বার |
বর্তমান ব্যালেন্সের পরিমাণ | 801 |
বর্তমান তারিখ | 802 |
বর্তমান সময় | 803 |
মিটার নাম্বার | 804 |
ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের পরিমাণ | 810 |
ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স সচল করা | 811 |
মিটারের অ্যালার্ম বন্ধ করা | 812 |
বর্তমান মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ | 814 |
সর্বশেষ রিচার্জের তারিখ | 815 |
সর্বশেষ রিচার্জের সময় | 816 |
সর্বশেষ রিচার্জের পরিমাণ | 817 |