ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসের লক্ষণ সমূহ

বিশ্ব জুড়ে Diabetes শব্দটি খুবই পরিচিত। প্রত্যেকটা স্থানে এমন কোন পরিবার খুজে পাওয়া যাবে না যেখানে ডায়াবেটিস এর রোগী নেই। পুরা বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী Diabetes একটি মহামারি রোগ। এ রোগ প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য সংস্থা এমন ঘোষণা দিয়েছেন ।

ডায়াবেটিস কি?

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছেন, ডায়াবেটিস এমন এটি ব্যাধি যা কখনো ভালো হয় না।   তবে নিয়ম মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। Diabetes এক ধরনের হরমোনজনিত রোগ। মানবদেহে রক্তে গ্লূকোজের পরিমান প্রয়োজনের চেয়ে অধিক বেশি হয়ে গেলে তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে সকল খাদ্য গ্রহণ করি বা খাই সে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত হয়ে গ্লূকোজে রূপান্তরিত হয় এবং ইনসুলিন নামক হরমোন গুলোকে কোষে সরবরাহ করে। এই কোষ গুলো শর্করাকে ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে যার ফলে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি পাই। যখন কোন ব্যাক্তির শরীরে এই প্রাকৃতিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায় বা প্রয়োজনের ‍তুলনায় কম হয় তখন তার শরীরে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বেশি হয় এবং ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়, যেটিই মুলত ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগটি ধীরে ধীরে সারাবিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটা পরিবারে গড়ে কমপক্ষে একজন করে ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রতি ২০ জনে ২জন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাই ডায়াবেটিস একটি পরিচিত রোগ।

কেনো হয়? 

অনেক কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে তবে জিনগত কারণেও ডায়াবেটিস হয়। এটিই প্রথম ও প্রধান কারণ। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধির সাথে ডায়াবেটিস এর সম্পর্ক রয়েছে। এ ধরনের রোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেমন বর্তমানে মানুষ তুলনামূলকভাবে কায়িক পরিশ্রম কম করে এবং খাওয়া দাওয়া নিয়মিত করে না।

হাইপারেশন, থাইরয়েড, হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভার আর্থারাইটিজের মতোই ডায়াবেটিস একটি রোগ। ডায়াবেটিস হলে মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ ঘাটতি হয়। প্রাচীনকালে মানুষ মাঠে খেলাধুলা করত। আর এখন মাঠে খেলাধুলার বদলে কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের গেমএ মনোনিবেশ করেছে। আগে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কায়িক পরিশ্রম অধিক ছিল। আর এখন রাস্তাঘাটে চলাচলের জন্য সাইকেলের পরিবর্তে স্কুটি/বাইক এমনকি প্রাইভেট কারও ব্যবহার করছে। আধুনিক যুগে সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মানুষ বর্তমানে কায়িক পরিশ্রম করা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। একটুতেই গাড়িতে চড়া, হাটাহাটি না করা এবং প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই শ্রম কমে গেছে। খাবারের দিকে লক্ষ কররে দেখা যায় মাছ, ভাত, শাকসবজির স্থানে পাস্তা, পিজ্জ্বা, কোল্ড ড্রিংস, আইসক্রিম, নুডলস এর মতো হাই ক্যালেরির খাবার গ্রহণ করছে। আর এই সমস্ত খাবার আগামীদিনের প্রেসার, হার্ট এবং সুগারের মতো বিভিন্ন রোগের প্রবেশ দ্বার। এছাড়াও এই সকল খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে কৃত্রিম চিনি থাকে যা আমাদের পরিপাক তন্ত্র সহজেই প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। যার ফলে আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস এ রূপান্তর হয়। 

ডায়াবেটিসের লক্ষণ সমূহ 

একজন মানুষের শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের যখন অভাব ঘটে বা দেখা দেয় তখন রক্তে  শর্করার হার স্বাভাবিক এর তুলনায় অধিক বেড়ে গেলে তখন সেটাকে ডায়াবেটিস বলে। বর্তমানে এই রোগটির বিস্তার অনেক বেশি হওয়ায় একে সার্বজনীন রোগও বলা যায়। অনেক চিকিৎসাবিদের মতে এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। চলুন ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো জেনে নেয়া যাক।

হঠাৎ করে শরীর শুকিয়ে যাওয়া

সুস্থ্য মানুষ হঠাৎ করে শুকিয়ে যাওয়া ডায়াবেটিসের একটি লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যা যদি দেখা যায় তাহলে আর দেরি না করে তাকে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো দরকার। পরীক্ষা যদি তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

চোখ ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া

শরীরে শর্করার পরিমান বেড়ে গেলে এটির প্রভাবে চোখের দৃষ্টি শক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কোন কিছু তখন ঠিক মত দেখতে পারে না অর্থাৎ চোখ ঝাঁপসা বা ঘোলা হয়ে আসে এবং পরিষ্কারভাবে কিছু দেখা যায় না। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসে। 

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া বা কমে যাওয়া

সুস্থ্য মানুষের চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অধিক হারে কমতে থাকে। রক্তে শর্করার পরিমান প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেলে এই ঘটনা ঘটতে  বা লক্ষ করা যায়।

ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি ভাব

একজন সুস্থ্য মানুষের শরীরে প্রায় ৭৮ ভাগ পানি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত ঘাম ও প্রস্রাব হওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। যার জন্য ডায়াবেটিস রোগীর চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়। এমনকি  চুলকানিও হয় এবং অনেক সময় চামড়ায় কালো কালো দাগ পড়ে। 

ঘন ঘন প্রসাব হওয়া  

Diabetes রোগীর ঘন ঘন প্রসাব হওয়া একটি প্রধান লক্ষণ। রোগীর রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে গেলে তা প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। যার জন্য ঘন ঘন প্রসাব হয়। তখন পানির পিপাঁসা বাড়ে যায়।

দুর্বলতা অনুভব করা

শরীরে শর্করার পরিমান বেশি থাকায় ক্ষুধার লাগে না। তাই খাবার খাওয়াতে অনিহা দেখা দেয়। এ কারণে শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত অনুভব হয়।

ক্ষত স্থান সহজে না শুকানো ও ইনফেকশন

এই সব রোগীর রক্তে শর্করার অস্বাভাবিকতার জন্য ঘন ঘন নানা ধরনের সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। আবার দেখা যায় কোথাও কেটে গেলে ক্ষত স্থান সহজে শুকায় না। অনেক সময় দীর্ঘ ধরে ক্ষত স্থান না শুকানোর ফলে ইনফেকশন হয়।

মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাওয়া

ডায়বেটিস এমন একটি রোগ যাতে মানুষ আক্রন্ত হলে তার মিষ্টির প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এরও যথার্থ কারণ আছে। যেমন এই রোগ হলে স্বাভাবিক ভাবেই তাকে মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হয়। তাই মিষ্টির প্রতি তার আগ্রহ বাড়াটাই স্বাভাবিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডায়াবেটিস রোগী যেখানে প্রসাব করে সেখানে কিছুক্ষণ পর প্রসাবে চিনির মত দলা দলা দেখা যায় এবং পিপঁড়াও দেখা যায় । 

বিরক্তি

মূলত খাবার থেকে দেহে শক্তি হয়। ডায়াবেটিস এর ফলে শরীরের খাদ্যগুলো ভালোভাবে পরিপাক হয় না। হয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপন্ন হয়না এবং শক্তি কমে যায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি হয় যার জন্য সব সময় খারাপ লাগে এবং বিরক্তি বোধ হয়।

এতোক্ষণ আমরা ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ সমূহ জানলাম। পরবর্তী পোস্টে আমার জানবো ডায়াবেটিস হলে আমাদের খাদ্যভ্যাস কেমন হবে এবং ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের নিয়ম সম্পর্কে। তবে তার আগে এই পোষ্ট টি আপনার ভালো লাগলে আপনার মতামতে অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *