ডাটা এন্ট্রি কি? ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শিখবো

ডাটা এন্ট্রি কাজ করে ইনকাম করার কথা আমরা প্রায়েই শুনে থাকি এবং আমাদের মধ্যে অনেকেই এখন Data Entry করে ইনকাম করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখি। তাই আজকে আমি আলোচনা করবো ডাটা এন্ট্রি কি, ডাটা এন্ট্রি কত প্রকার এবং কিভাবে ডাটা এন্ট্রি শিখবেন সে সম্পর্কে।

আধুনিক বিশ্বে ডাটা (data) বা তথ্যের আদান-প্রদান খুবই জরুরি একটি বিষয়। সেই সাথে প্রযুক্তির এই সোনালি যুগে দ্রুততম সময়ে তথ্যের আদান প্রদান এবং তথ্যের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার প্রধান ভূমিকা পালন করে। 

আর ডাটা এন্ট্রি হলো এমন একটি কাজ যেখানে যেকোন ধরনের ফিজিক্যাল ডাটাকে কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রোগ্রামের সাহায্যে ডিজিটাল ডাটা হিসেবে স্টোর করা হয়ে থাকে। তাই ডাটা এন্ট্রি এখন ছোট-বড় যেকোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সরকারী কার্যালয়, প্রশাসনিক কার্যালয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় একটি কাজ।

ফলস্বরূপ এসব ক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের চাহিদাও ব্যাপক। কেননা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া চাইলেই যে কেউ এই কাজগুলো করতে পারবে না। তবে এই কাজগুলো শেখা যে খুবই কঠিনসাধ্য তাও কিন্তু নয়। 

তাছাড়া Data Entry অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতেই করা যায়। এমনকি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় পেশা হওয়ায় অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও এই কাজের সমান চাহিদা। যে কারণে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ ডাটা এন্ট্রি কাজ করে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন।

তো আপনিও যদি একজন Data Entry Operator হতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং প্রতিটি টিপস খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। 

তাহলে চলুন প্রথমেই জেনে নেই ডাটা এন্ট্রি কাজ বলতে কি বুঝায়।

ডাটা এন্ট্রি কি

সাধারণভাবে ডাটা (Data) অর্থ হলো “তথ্য” এবং এন্ট্রি (Entry) অর্থ হলো “লিপিবদ্ধ করা বা সংগ্রহ করা”। অর্থাৎ ডাটা এন্ট্রি মানে হলো তথ্য সংগ্রহ করা এবং তথ্য লিপিবদ্ধ করা। 

আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, ডাটা এন্ট্রি হলো কোনো হার্ড কপি হতে প্রাপ্ত ডাটা টাইপিং (Typing) এর মাধ্যমে কম্পিউটারে সফট কপি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা এবং spreadsheet আকারে এর রেকর্ড তৈরি করে রাখা।

এখানে ডাটা বলতে মূলত বিভিন্ন ফরমেটের তথ্যকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- text, file, number, audio, video, object, image, media, information ইত্যাদি। 

এই ডাটাগুলোকে কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটারের কিবোর্ডের মাধ্যমে টাইপিং করে ডিজিটালি কম্পিউটারের ডাটাবেজে স্টোর করা হয়। এক্ষেত্রে MS-office, MS-excel, Wordpad, Note pad প্রভৃতি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

আর যারা এ ধরনের কাজগুলো করে থাকেন তারা সাধারণত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (Data Entry Operator) হিসেবে পরিচিত। ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে অবশ্যই কিছু নির্ধারিত যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। যেমন-

  • কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে। 
  • ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করার দক্ষতা থাকতে হবে। 
  • কম্পিউটারের কিবোর্ডের ব্যবহার জানতে হবে। 
  • মাইক্রোসফট অফিস এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিভাবে অপারেট করতে হয় তা জানতে হবে। 
  • ইংরেজিতে কনভার্সেশন করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে।

মোটামুটি এ কয়টি যোগ্যতা যদি কারোর মধ্যে থাকে তবে সে সামান্য প্রশিক্ষণ ও চর্চার মাধ্যমে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হতে পারেন এবং যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এমনকি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও এক্ষেত্রে পসিবল।

তো বন্ধুরা! ডাটা এন্ট্রি কি এবং ডাটা এন্ট্রি কাজ কিভাবে করতে হয় বিষয়টি সহজেই বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন এবার পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাক।

ডাটা এন্ট্রি কত প্রকার

ডাটা এন্ট্রি হলো যেকোন হার্ডকপি থেকে কোনো ডাটা সফটকপি হিসেবে কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা। এক্ষেত্রে এই ডাটাগুলো কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা হতে পারে। 

এভাবে ডাটার ধরন অনুযায়ী ডাটা এন্ট্রি কাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-

  • Official Work
  • Spelling checking
  • Data conversion
  • Database creation
  • Translation

তো চলুন এবার এই কাজের ধরনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

Official Work

বর্তমানে বেশিরভাগ অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন কাজের রেকর্ড ফিজিক্যাল ডকুমেন্টে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সেগুলো কম্পিউটারে ডিজিটাল ডাটা হিসেবে সংরক্ষণ করাকে বেশি লাভজনক এবং সিকিউর মনে করে থাকে। 

এক্ষেত্রে ডাটা অপারেটরগণ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সমূহ যেমন- purchase, sale, feedback প্রভৃতি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এমএস এক্সেল (MS Excel) সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে রেকর্ড করে থাকে। এছাড়া MS Excel ব্যবহার করে ডাটা সমূহ যেকোন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা মুছে ফেলা যায়।

Spelling Checking

স্পেলিং চেকিং ডাটা এন্ট্রি কাজগুলোর মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি কাজ। বিশেষ করে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এ ধরনের কাজের চাহিদা ব্যাপক। 

এক্ষেত্রে একজন অপারেটরকে লিখিত কোনো ডকুমেন্ট, আর্টিকেল, কন্টেন্ট, বই অথবা যেকোনো রেকর্ডের স্পেলিং অর্থ্যাৎ বানান চেক করতে হয় এবং এর বিনিময়ে সে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

Data Conversion 

ডাটা কনভার্শন মানে হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট ফরমেটের ডাটাকে অন্য আরেকটি ফরমেটে কনভার্শন করা অর্থ্যাৎ রূপান্তর করা। 

যেমন ধরুন আপনাকে pdf ফরমেটে লেখা একটি ফাইল দেওয়া হলো যেটিকে এখন word ফাইলে রূপান্তরিত করতে হবে। এমনিভাবে word file থেকে pdf file, doc file থেকে word file, JPG file থেকে Excel file, JPG file থেকে PPT file, অথবা PPT file থেকে JPG file-এ রূপান্তর করা ডাটা conversion কাজের মধ্যে পরে।

Database Creation 

বিভিন্ন সময় কাজের প্রয়োজনে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ডাটাবেজ তৈরি করে থাকে। যেমন- কোন একটি নির্ধারিত এলাকার বা গ্রামের জনসংখ্যা, শিশুদের সংখ্যা অথবা বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা প্রভৃতি বিষয় ফিজিক্যাল ডকুমেন্ট আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। 

পরবর্তীতে এই সমস্ত ডকুমেন্ট থেকে সকল ডাটা ডিজিটালি কম্পিউটারে এন্ট্রি করানো হয়। ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে এখন ডাটাবেজ ক্রিয়েশনের কাজ করে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। যেহেতু প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Translation

ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে ট্রান্সলেশন অপেক্ষাকৃত আধুনিক একটি কাজ এবং উত্তরোত্তর এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা উভয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রান্সলেশন কথাটি শুনে নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন যে, এখানে আসলে কি কি কাজ করতে হয়। 

হ্যাঁ বন্ধুরা! এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন ডাটা ট্রান্সলেট অর্থ্যাৎ অনুবাদ করতে হবে। যেমন- বাংলায় লেখা কোন কন্টেন্টকে ইংরেজিতে রূপান্তরিত করতে হতে পারে অথবা অডিও কোন ফাইল থেকে ডাটাগুলোকে ওয়ার্ড ফাইলে ট্রান্সলেট করতে হতে পারে।

তো এই ছিলো সবথেকে আলোচিত পাঁচটি ডাটা এন্ট্রি কাজের বিস্তারিত আলোচনা।

আবার, Data Entry কাজের মার্কেটপ্লেসের ধরন অনুযায়ী এটিকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-

  • Online Data Entry Job
  • Offline Data Entry Job

Online data entry job

পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে ইন্টারনেটের সাহায্যে ভার্চুয়ালি যদি ডাটা এন্ট্রির কোনো কাজ করা হয় তবে তাকে অনলাইন ডাটা এন্ট্রি জব বলা হয়। 

অর্থ্যাৎ আপনি যখন বাংলাদেশে আপনার নিজ বাড়িতে বসে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক ক্লায়েন্টের ডাটা এন্ট্রি কাজ করে দেবেন তখন সেটি হবে অনলাইন ডাটা এন্ট্রি কাজ।

এক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এবং তাতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। তাহলেই আপনি ঘরে বসে অনলাইনে দেশ অথবা বিদেশের ডাটা এন্ট্রি ভিত্তিক যেকোন কাজ করতে পারবেন।

Offline data entry job

ডাটা এন্ট্রি সেক্টরের কোনো কাজ যখন আপনি স্বশরীরে আপনার অফিস অথবা চাকরিরত স্থানে বসে করবেন তখন তাকে অফলাইন ডাটা এন্ট্রি জব বলা হয়।

এক্ষেত্রে আপনাকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে হবে এবং অফিসে বসেই নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া আপনার নিজস্ব ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থাকা বা না থাকার কোন বাধ্যবাধকতা নাও থাকতে পারে। 

ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শিখব

ডাটা এন্ট্রি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতেই শেখা সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের কাজ শেখার পূর্বে আপনাকে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই অবগত থাকতে হবে। যেমন-

  • Data Entry কাজ কয় ধরনের হয়ে থাকে।
  • সেগুলোর কোনটি কিভাবে করতে হয়। 
  • কোনটির কি বিশেষত্ব রয়েছে। 
  • কোন কাজটি শেখা আপনার জন্য সবথেকে ভালো হবে।
  • কোন কাজটি করতে আপনি সবথেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

তো এভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজকে বেছে নিন এবং সেটি সঠিকভাবে শেখার চেষ্টা করুন। তাহলে এবার আসা যাক কিভাবে এই কাজগুলো শিখবেন সে কথায়। 

আপনি যদি অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি শিখতে চান তাহলে অনলাইনে এমন অসংখ্য সাইট পাবেন যেখান থেকে আপনি নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে ডাটা এন্ট্রির কোর্স ক্রয় করতে পারবেন এবং প্র্যাকটিক্যালি শিখতে পারবেন।

এছাড়া ইউটিউব এবং বিভিন্ন ব্লগসাইট থেকেও বিনামূল্যে এ ধরনের কাজগুলো শেখা সম্ভব। এজন্য আপনার যা যা প্রয়োজন হবে তা হলো: নিজস্ব ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ।

আবার, আপনি যদি অফলাইনে কাজ শিখতে চান তাহলে এমন অনেক কোচিং সেন্টার আপনি পাবেন যেখান থেকে ডাটা এন্ট্রির কোর্স ক্রয় করতে পারেন এবং কাজ শিখতে পারেন। 

শেষ কথা

ডাটা এন্ট্রি কি এবং কত প্রকার এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা আশা করি আপনাদের ভালোলেগে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে এসব কাজের বর্তমানে অনেক চাহিদা এবং ভবিষ্যতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। 

প্রাথমিকভাবে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করতে থাকলে একটা সময় এ কাজের সম্ভাবনা ও সফলতা দুটোই আপনার হাতের নাগালে চলে আসবে। সুতরাং ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় নিয়ে লেগে থাকুন, তাহলে আপনিও একদিন সফল হবেন ইনশাল্লাহ্।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *