একটি দেহের সুস্থ সবল থাকার জন্য পানির প্রয়োজন সবসময় থাকে। কারন পানি দেহের কোষ গুলোকে সতেজ এবং জীবন্ত রাখে। পানির কারনে দেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরের কেমিক্যাল ভারসাম্য ঠিক থাকে। এখন কোন কারনে শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে আমাদের অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন মেটানো না হলে ডিহাইড্রেশন সমস্যার কারনে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যাহোক, শরীরে পর্যাপ্ত পানির যোগান দিতে সাধারন পানি পান করার সাথে সাথে বিভিন্ন পানি যুক্ত ফল খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের আজকের পোস্টে গরমের সময়ে উপকারী ১০ টি ফল সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
বিষয় বস্তুসমূহঃ
গরমের সময়ে উপকারী ১০ টি ফল
গ্রীষ্মকালে তাপের কারনে আমাদের শরীর অনেক ঘেমে যায় এবং শরীর থেকে পানি এবং ফ্লুয়িড বের হয়ে যায়। তখন শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে আমাদের বেশি বেশি পানি খাওয়ার প্রয়োজন পরে। সে সময় সাধারন পানির সাথে সাথে নিম্নোক্ত ফল গুলো অনেক উপকারে আসে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে ধারনা নেই।
আনারস
আনারস অনেক সুস্বাদু একটি ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব যায়গায় আনারস পাওয়া যায়। আনারসে মোট পানির পরিমাণ ৮৭ শতাংশ যা শরীরে পানির স্বল্পতা দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়া আনারসে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, থাইমিন, ফসফরাস, ম্যাংগানিজ এবং ফাইবার থাকে। যা শরীরের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করে।
আপেল
আপেল বাংলাদেশে প্রচলিত একটি অভিজাত ফল। আপেলে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রচুর পরিমানে থাকে। আপেল যে কোন সময়ে পাওয়া যায় এবং সব পরিস্থিতিতে খাওয়া যায়। আপেলে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে। এতে ৮৪ শতাংশ পানি থাকে যা গরম কালে শরীরে পানি স্বল্পতা পুরনে অনেকটা সাহায্য করে।
জাম্বুরা
গরমের সময় অতিরিক্ত তাপ আমাদের শরীর থেকে পানি শুষে নেয়। এতে শরীরের পানির ভারসাম্য অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এছাড়া শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের। জাম্বুরা এমন একটি ফল যার ৯১ শতাংশ পানি এবং বাকি অংশ ফাইবার। এতে সল্প পরিমাণে ভিটামিন এ, কে, ই এবং বি কমপ্লেক্স আছে। অন্যান্য পুষ্টি গুণের মধ্যে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
কমলা
কমলা আমরা সবাই চিনি। শিশু থেকে বয়স্ক সবার পছন্দের খাবার এই কমলা। এটি খেতে মিষ্টি এবং টক উভয় স্বাদেই পাওয়া যায়। কমলায় ৮৭ শতাংশ পানি থাকে এবং এতে অনেক কম ক্যালরি শক্তি থাকে। এছাড়া প্রতিটি কমলায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, কপার, সেলেনিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। এগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অনেক উপকারী। কমলায় অনেক বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ, বি এবং সি থাকে।
তরমুজ
শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য তরমুজ সবথেকে উপযুক্ত একটি ফল। এতে ৯২ শতাংশ পানি আছে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য একদম উপযুক্ত একটি ফল। তরমুজ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক। এতে ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম নামক পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের লবণের অভাবে পূরণ করে। অন্যদিকে তরমুজ খাওয়ার কারনে শরীর অনেক ঠাণ্ডা থাকে যা গরমের সময় আরামদায়ক হয়।
আঙুর
আঙুর একটি ছোট ও রসালো ফল। এটি খেতে মিষ্টি এবং টক দুরকমই লাগে। এতে শতকরা ৮২ শতাংশ পানি থাকে যা গরমকালে শরীরের পানির স্বল্পতা কমায়। আঙুরে ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন কে, সি, বি ১+৬ আছে যা এর পুষ্টিগুন নিশ্চিত করে।
স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে ৯২ শতাংশের মত পানি থাকে যা গরমকালে শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। এতে পরিমিত পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ফলিক এসিড এবং ফাইবার থাকে। এগুলো দেহের সুস্থ থাকায় সাহায্য করে। স্ট্রবেরিতে কোন ফ্যাট, সোডিয়াম এবং কোলেস্টেরল নেই। এছাড়া স্ট্রবেরি একটি লো ক্যালরি যুক্ত ফল। একে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়।
ক্যান্টালাপ
ক্যান্টালাপ গ্রীষ্মকালের জন্য একটি উপকারী ফল। এতে মোট পানির পরিমাণ ৯০ শতাংশ। যা খেলে শরীরের পানিস্বল্পতা অনেক টুকু দূর হয়। তাছাড়া ক্যান্টালাপ ফলে ভিটামিন এ, সি এবং কে আছে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আছে প্রোটিন, ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম। ক্যান্টালাপ ডায়বেটিক এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য অনেক উপকারী ফল।
পেঁপে
পেঁপে আমাদের দেশের একটি প্রচলিত ফল যা গ্রামগঞ্জ থেকে বড় বড় শহরে সমানভাবে পরিচিত। প্রতিটি পেঁপেতে শতকরা ৯১ শতাংশ পানি আছে। যা শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। পেঁপেতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, সি এবং ই আছে যা মানব শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়া পেঁপের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের থেকে খুব একটা কম নয়। গরমের সময় পেঁপে শরীর এবং মস্তিষ্ক দুটো ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।
পিচ
পিচ নামক ফল গরমের দিনে পানি স্বল্পতা কমাতে অনেক সাহায্য করে। কারন প্রতিটি পিচ ফলে শতকরা ৮৮ শতাংশ পানি থাকে। এই পানি দেহ থেকে নিঃসরিত হয়ে বের হয়ে যাওয়া পানির অভাব পূরণ করে। এতে দেহ ডিহাইড্রেড হওা থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া পিচ ফলে অনেক বেশি পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে। একটি পিচ ফলে ভিটামিন এ, সি এবং কে সহ পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম সহ অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই পর অনেক সুস্বাদু এবং রসালো হয়।
উপরিউক্ত আলচনায় আমরা গ্রীষ্মকালে উপকারে লাগবে এমন ১০ টি ফল সম্পর্কে জানতে পারলাম। আশাকরি লেখাটি পড়ে অনেক নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।