বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ঔষধ কোম্পানি

একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যেত। ধীরে ধীরে সে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কারণ এখন চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহার হওয়া ঔষধ আমাদের নিজের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। শুধু যে ঔষধ উৎপাদিত হচ্ছে তা নয়, এর সাথে সাথে আধুনিক মেডিক্যাল সামগ্রীও তৈরি করা হচ্ছে। এতে যেমন আমাদের বাইরের দেশের উপর নির্ভরতা কমছে তেমনি দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। যাহোক, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ যে কয়েকটি খাতে এগিয়ে গিয়েছে তার মধ্যে ঔষধ খাত অন্যতম। বর্তমান দেশে অনেক বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি আছে যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশে ঔষধ রপ্তানি করছে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ঔষধ কোম্পানি সম্পর্কে জানবো।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

সামসন এইচ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে একটি ঔষধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার তিনজন বন্ধু মিলে কোম্পানি শুরু করলেও তা শুরুর দিকে প্রাইভেট কোম্পানি ছিল। 

১৯৯১ সালে তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটে তাদের কোম্পানির শেয়ার উন্মুক্ত করে পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়। স্কয়ার এর সদরদপ্তর ঢাকার মহাখালীতে। স্কয়ার অন্যান্য ঔষধ তৈরির পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক ঔষধ তৈরি করে। 

পুরো দেশে সাপ্লাই দেওয়া বাদেও তারা বিশ্বের ৩৬ টি দেশে ঔষধ এক্সপোর্ট করে থাকে। স্কয়ারের বর্তমান মার্কেট ক্যাপিটাল ১.৭ বিলিয়ন ডলার। তাদের নেট ইনকাম প্রতি বছর ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের মোট কর্মী সংখ্যা ৯২৩৪ জনের মত।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

ইনসেপ্টা সাধারণত জেনেরিক ঔষধ তৈরি করে। ১৯৯৯ সালে ইনসেপ্টা প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির। 

ইনসেপ্টার সদরদপ্তর হলো রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায়। তাদের দুইটি উৎপাদন কেন্দ্র আছে যার একটি সাভারে এবং অপরটি ধামরাই এলাকায় অবস্থিত। শুরুর দিকে তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য ঔষধ তৈরি করলেও বর্তমানে তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিয়ে থাকে। 

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অনেক উন্নত মানের ঔষধ তৈরি করে ইনসেপ্টা অনেক পপুলার হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে তারা একটি জার্মান ঔষধ কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে যে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে একসাথে কাজ করবে। এটি একটি দেশি কোম্পানির জন্য অনেক বড় অর্জন। এছাড়া ইনসেপ্টা BPL এ রংপুর রাইডারস এর প্রধান স্পন্সর হিসেবে কাজ করছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস হলো বেক্সিমকো গ্রুপ অফ কোম্পানি এর একটি প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কে বেক্সিমকো ফার্মা নামেও ডাকা হয়। 

যদিও ১৯৭৬ সালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তাদের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। বেক্সিমকো বাংলাদেশী প্রথম ঔষধ কোম্পানি যারা ইউএস মার্কেটে ঔষধ রপ্তানি করে। তারা তাদের নিজস্ব কোম্পানিতে নিজস্ব ব্র্যান্ড এর আন্ডারে বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরি করে। 

এদের মধ্যে এইডস, ক্যান্সার, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিকস ইত্যাদি। বেক্সিমকোর সদরদপ্তর ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় এবং এর বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন নাজমুল হাসান পাপন। 

২০১৮ সালের তথ্যমতে বেক্সিমকোর মোট রেভিনিউ ২২.৮ বিলিয়ন ডলার এবং নেট ইনকাম প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এখানে মোট ৪৫২৩ জন কর্মী কাজ করে। দেশের সকল চাহিদা মিটিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অন্যান্য দেশে ঔষধ রপ্তানি করে।

অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড

অপসোনিন ফার্মা আব্দুল খালেক খান দ্বারা ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদরদপ্তর হলো ৩০ নিউ ইস্কাটন এলাকায় যা ঢাকায় অবস্থিত। Intercontinental Marketing Services, Health বা IMS Health এর তথ্যমতে বাংলাদেশে বিক্রির দিক দিয়ে অপসোনিন চতুর্থ বৃহত্তম ঔষধ কোম্পানি। 

অল্প দামে ভালো ঔষধ তৈরি করার কারণে অপসোনিন এই পর্যায় পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তারা বর্তমানে ৩৫০ ব্র্যান্ড এর ৮০০ ভেরিয়েশন প্রোডাক্ট তৈরি করে। দেশের মাটিতে ঔষধের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে। তারা বাংলাদেশের বাইরে আরও ২৫ টি আলাদা আলাদা দেশে ঔষধ রপ্তানি করে থাকে। অপসোনিন ফার্মায় মোট ৬২৪১ জন কর্মী কাজ করে এবং এদের মোট রেভিনিউ ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির নাম পূর্বে ফাইজার ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ছিল। সাধারণত মানুষের ঔষধ তৈরির পাশাপাশি এরা পশু পাখীর ঔষধ তৈরি করে। বর্তমান বাংলাদেশের টপ ১০ ঔষধ কোম্পানির মধ্যে রেনেটা অন্যতম। 

পশু চিকিৎসা বাদেও তারা পশুর জন্য পুষ্টি বর্ধক প্রোডাক্ট তৈরি করে। এছাড়া তারা হরমোন, স্টেরয়েড এবং সাইটোটক্সিক ঔষধ তৈরি ও বিদেশে রপ্তানি করে। রেনেটার বর্তমান প্রধান নির্বাহী হলেন সৈয়দ এস কায়সার কবির এবং এর সদরদপ্তর ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। সব মিলিয়ে বর্তমানে মোট ৩৪৮৫ জন কর্মী কর্মরত আছেন।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস SK+F নামেও পরিচিত। এর বর্তমান প্রধান নির্বাহী হলেন সিমেন রহমান। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ট্রান্সকম কোম্পানির একটি অংশ যা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এরা মানব ঔষধ বাদেও বিভিন্ন প্রাণীর ঔষধ, পুষ্টি বর্ধক ইত্যাদি সহ থেরাপিতে ব্যবহৃত ঔষধ তৈরি করে থাকে। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস এর হেডকোয়ার্টার ঢাকার গুলশানে অবস্থিত। বর্তমানে বিশ্বের ২১ দেশে তারা ঔষধ রফতানি করছে।

একমি ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ

একমি একটি বাংলাদেশী স্বনামধন্য ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি। ১৯৫৪ সালে মিঃ হামিদুর রহমান সিনহা একমি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তারা ৫০০ ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি ও বিক্রি করে। 

শুরুতে তাদের কোম্পানি ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থাকলেও তা পরে কল্যাণপুর এলাকায় শিফট করা হয়। বরতমানে একমিতে ৭০০০ জন কর্মী কাজ করে। তারা মানব ঔষধ বাদেও পশুপাখির ঔষধ, হারবাল এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা

এসিআই বাংলাদেশ লিমিটেড

এসিআই বা অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ একটি শিল্প গ্রুপ। ১৯৯২ সালে এসিআই বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা একাধারে ঔষধ, রাসায়নিক, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক সহ অনেক প্রোডাক্ট তৈরি করে। 

এটি একটি পাবলিক কোম্পানি যার চেয়ারম্যান মিঃ এম আনিসুদ্দৌলা। এসিআই কোম্পানিতে বর্তমানে ১০ হাজারের মত কর্মী কাজ করে এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মোট বিক্রি ছিল ৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার মত।  

অ্যারিস্টোফার্মা লিমিটেড

অ্যারিস্টোফার্মা বাংলাদেশের ১০ টি টপ ঔষধ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৬ সালে কোয়ালিটি সম্পূর্ণ ঔষধ বাজারে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যারিস্টোফার্মার যাত্রা শুরু। 

তারা সকল ধরনের হাই টেক চিকিৎসা সামগ্রী তৈরি করছে। তারা বাংলাদেশ বাদেও বিশ্বের ৩৪ টি দেশে ঔষধ রফতানি করে। তাদের মোট ২০০ ব্র্যান্ডের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমানে অ্যারিস্টোফার্মায় ৬০০০ জন কর্মী কর্মরত আছে। অ্যারিস্টোফার্মার সদরদপ্তর ঢাকার পুরনো পল্টন এলাকায় এবং এর চেয়ারম্যান হাসান কর্পোরেশনের মালিক এম এ হাসান।  

ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড

ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে এবং কার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৩ সাল থেকে। শুরুর দিকে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক চলতো পরে তারা নিজস্ব প্রোডাক্ট তৈরি করা শুরু করে। 

বাংলাদেশে তারা প্রথম কোম্পানি যারা সফট ক্যাপসুল প্রবর্তন করে। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ডাক্তার এম এম আমজাদ হুসাইন এবং বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন এম এ হায়দার হুসাইন। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালে বর্তমানে ৫০০০ এর থেকেও বেশি কর্মী কাজ করে। তারা সাধারণ প্রচলিত ঔষধ তৈরির পাশাপাশি হারবাল এবং ইউনানি ঔষধ তৈরি করে থাকে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে ২৫০ টির বেশি নিবন্ধিত ঔষধ কোম্পানি আছে। এদের মধ্যকার অনেক কোম্পানির নাম আমরা জানি এবং ইতোমধ্যে শুনেছি। এই লেখায় আমরা সার্ভিস এবং রেপুটেশন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এবং বিভিন্ন জরিপের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ঔষধ কোম্পানি শর্টলিস্ট করেছি। আশাকরি লেখাটি পরে আপনি বাংলাদেশের সেরা ঔষধ কোম্পানি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে। আপনার মতামত কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।

2 Comments

  1. দি ইবনে সিনা কতো নাম্বারে আছে? জানাবেন কি?

    • কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার খুব শিঘ্রই ইবনে সিনা কে নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল পাবলিশ করবো। আপনি সেখানে বিস্তারিত জানতে পারেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *