নিয়মিত খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

পৃথিবীতে অনেক জান্নাতি ফল রয়েছে, যেমন- খেজুর, আঙ্গুর, কলা, জলপাই ও ডালিম হচ্ছে জান্নাতি ফল। পবিত্র হাদিস শরীফে এই খেজুরকে জান্নাতের ফল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। খেজুর আমাদের নবী রাসূল (সা.)-এর প্রিয় ফল ছিল এবং এর উপকারিতাও অপরিসীম। খেজুর খুবই উপকারী ফল এতে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার শরীরের গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে এবং হাড় ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। খেজুরে সালফার কম্পাউন্ড রয়েছে এবং এই সালফার কম্পাউন্ড অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। খেজুর কম বেশি সারা বছরই পাওয়া যায় তবে খেজুর সাধারণত রমজান মাসে ইফতারির সময় মানুষ বেশি খেয়ে থাকেন। তবে রমজান মাস ছাড়াও এই সুস্বাদু ফলের চাহিদা বারো মাসই থাকে। সবখানে পাকা ও বিদেশি খেজুর চাহিদা বেশি। তবে গ্রাম অঞ্চলে এখনো রয়েছে দেশি খেজুর। গ্রামে দেশি খেজুর খাওয়ার প্রচলন এখনো রয়েছে। তবে দেশি খেজুরের তুলনায় বিদেশি খেজুরে জলীয় অংশ বেশি থাকে, সেটি অধিক শক্তিবর্ধক। তাই দেশি খেজুরের থেকে বিদেশী খেজুরের চাহিদা বেশি।

অপর দিকে দেশি খেজুরে জলীয় অংশ কম থাকায় এত সুগার এর পরিমাণ কম থাকে, তাছাড়া এই দুই ধরনের খেজুরের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে পাকা খেজুরের পাশাপাশি খেজুর শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেও বিক্রি করা হয়। তবে শুকনো খেজুরে প্রোটিন এর পরিমাণ কম থাকে।

শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও প্রতিদিন নিয়ম করে এক দুইটি খেজুর খাওয়া উচিত। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। খেজুরে আরও যে সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে তাহলো: 

  • কোবাল্ট
  • ক্লোরিন
  • বোরন
  • গেলেনিয়াম
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • ভিটামিন এ, বি, সি
  • প্রোটিন
  • সালফার
  • ফাইবার
  • আয়রন ও
  • ম্যাঙ্গানিজ 

তাই আপনারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন, এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। প্রায় ৮০% চিনি জাতীয় উপাদান রয়েছে খেজুরে আর বাদ বাকি ২০% রয়েছে খনিজ সমৃদ্ধ কোবাল্ট, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক এর মত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান।

খেজুরের উপকারিতা

সর্বোপরি খেজুর একটি উপকারী ফল। এ জন্য এই ফলের চাহিদা অনেক। আমরা এতক্ষণ জানলাম এই ফলে কি কি গুনাগুন ও খাদ্য উপাদান আছে। এখন আমার আলোচনা করবো এই খাদ্য উপাদান গুলো আমাদের শরীরের কি কি ধরণের কাজে লাগে তা নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক

শক্তি বর্ধন

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হজম শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর ফুলের পরাগরেণু ডি এন এর গুণগত মান বৃদ্ধি করে, বন্ধাত্ব দূর করে, অন্ডকোষের শক্তি বাড়ায় এবং শুক্রাণু বৃদ্ধি করে।

ক্যান্সার থেকে রক্ষা

লাংস ও ক্যাভিটি এই ২ টি খাদ্য উপাদান আপনাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে। এই বিশেষ ২ টি খাদ্য উপাদান আপনি খেজুরে পাবেন। তাই খেজুর আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকেও রক্ষা করে। 

হার্টের সমস্যা

হার্টের রোগীদের প্রতিদিন খেজুর খাওয়া জরুরী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সারা রাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকাল বেলা পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থ্যতায় অনেক কাজ করে। এই ফল হার্টের জন্য অধিক কার্যকারী। 

কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর খেলে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীরও সুস্থ্য থাকে। 

দেহের দুর্বলতা

শরীর নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে আবার অনিয়মিত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন খেজুর খেয়ে দুর্বলতা কমাতে পারেন। খেজুর স্বল্প সময়ে ও খুব সহজে যেকোন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

রক্তশূন্যতা

খেজুর এমন এক ধরনের ফল যা লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে রক্তশূণ্যতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই খেজুর নিয়মিত খেলে দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 

হজম ও রুচি বাড়ায়

নানা কারণে খাবারের প্রতি রুচি নষ্ট হয়। রুচি বাড়াতে খেজুরর কার্যকারিতা অত্যাধিক। যেসব শিশু ঠিকমত খাবার খেতে চায় না সে সব শিশুদের নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি অনেকটায় ফিরে আসে। এই ফলে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনসুবল, ফাইবার ও নানা ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড যা খুব সহজেই খাবার হজমে সাহায্য করে। 

স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়

একটি খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে যা একজন মানুষকে স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহকতাকে প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়। এভাবে খেজুর স্ট্রোকের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়

প্রত্যেকেরই কম বেশি খেজুর খাওয়া দরকার কারণ খেজুরে রয়েছে খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। প্রত্যেক দিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করলে দেহের অতিরিক্ত কলেস্টোরল কমায় ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা কমে আসে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

বাংলাদেশে খেজুরের মৌসুম হচ্ছে শীতকাল, মূলত শীতকালে খেজুর হয় এই সময় খেজুর বেশি পাওয়া যায়। খেজুরে ফলে আমিষ ও শর্করা রয়েছে আবার খেজুর শুধু সুস্বাদু ফলই নয় বরং পুষ্টিকরও। 

খেজুর খেলে যা হবে

  • ইফতারে যারা শরবত পান করেন না, তারা ইফতারে কয়েকটি খেজুর খেলে শরবত এর চেয়েও বেশি শক্তি পেতে পারেন।
  • খেজুর হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্ত প্রবাহে গতি সঞ্চার করে।
  • মানব দেহে সোডিয়াম,পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।
  • এই ফল ডিহাইড্রেশন রোধ করে।
  • খেজুরে রয়েছে এমন সব পুষ্টিগুণ যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 
  • যাদের শরীরে পটাশিয়াম বেশি ও ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত। 
  • খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম যা হাড়কে মজবুত করে ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। 
  • এই ফলে প্রচুর শর্করা রয়েছে আবার এটি খেলে মিষ্টি জাতীয় খাবা খাওয়ার চাহিদা পুরণ হয়। 

তাছাড়াও উচ্চমাত্রার শর্করা, ঠান্ডাজনিত সমস্যা, মূত্রনালীর ইনফেকশন, যৌনরোগ, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, কণ্ঠনালির ব্যথা, গনোরিয়া,  শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর বেশ উপকারী। খেজুর খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, এই ফল মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে সহায়তা করে এবং নারীর শ্বেতপ্রদর এ খেজুর বেশ কার্যকর। খেজুরে উপস্থিত থাকা ডায়েটরই ফাইবার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, প্রত্যেক দিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাতকানা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে এবং সব ধরনের রোগের জন্য খুবই উপকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *