পুরোনো ফোন কেনার আগে ১০ টি বিষয় জানা জরুরি

বিভিন্ন বাই-সেল ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা মাঝে মাঝে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য সম্পর্কে অ্যাড দেখি এবং ক্রয় করি। সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসের মূল্য মার্কেটের থেকে কম থাকায় কিছু টাকা সেভ করা যায়। এছাড়া কোন পছন্দের পণ্য যা ইতিমদ্ধে মার্কেটে অ্যাভেইলেবল না তেমন কিছু কিনতে আমাদের পুরনো পণ্যের শরণাপন্ন হতে হয়। বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক পণ্য যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি পুরনো নিলে মার্কেট প্রাইসের থেকে অনেক কম টাকায় কেনা যায়। পুরনো ফোন কেনার আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হয়। নাহলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা জানবো পুরনো ফোন কেনার আগে যে ১০ টি বিষয় জানা জরুরি। তো চলুন শুরু করা যাক।

প্রাইস যাচাই

পুরনো ফোন কেনার আগে আমাদের সবার প্রথম কাজ হলো দাম যাচাই করা। অর্থাৎ আপনি যে ফোন নিতে চাচ্ছেন সেই মডেলের ফোনের বর্তমান মার্কেট প্রাইস অনলাইনে অথবা অফলাইন মার্কেট থেকে দেখে নিবেন। এভাবে পুরনো ফোনের দাম নির্ধারণ করাও সহজ হবে। সঠিক দাম দেখার জন্য ব্র্যান্ড এর ওয়েবসাইট থেকে মডেল অনুযায়ী দাম দেখে নিবেন।

ফোনের আইএমইআই চেক

আইএমইআই হলো ফোনের একটি পার্সোনাল আইডেন্টিটি। প্রতিটি ফোনের আইএমইআই আলাদা আলাদা হয়। এর সাথে সিম বা নেটওয়ার্ক সার্ভিসের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আপনার ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে আইএমইআই দিয়ে ফোনের লোকেশন বের করা যায়। ফোনের ডায়াল প্যাডে *#06# এই কোড লিখলেই আইএমইআই উইন্ডো ওপেন হবে এবং সেখানে ২টি আলাদা আলাদা কোড দেখাবে। পুরনো ফোন কেনার আগে অবশ্যই আইএমইআই দিয়ে ফোনের স্ট্যাটাস চেক করে নিবেন। কারণ যে ফোন নিচ্ছেন তা যদি ছিনতাই বা চুরি করা হয় তাহলে পরবর্তীতে আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পরে যেতে পারেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার আইএমইআই এর একটি ডাটাবেস তৈরি করেছে। এখানে সকল বৈধ ফোনের আইএমইআই কোড স্টোর করা আছে। আপনি এখান থেকেও ফোন যাচাই করে নিতে পারবেন।

পারফরম্যান্স কন্ডিশন

সাধারণত যেসব ফোনে ২ জিবির নিচে র‍্যাম থাকে সেসব ফোন খুব ভালো পারফরমেন্স দেয় না। একটি ফোন সুন্দর মত চালাতে অবশ্যই ভালো পারফরম্যান্স দরকার আছে। এছাড়াও এর সফটওয়্যার ভিত্তিক পারফরমেন্স চেক করে নিতে হবে। যেমন কোন অ্যাপ কতো সময় নিয়ে ওপেন হচ্ছে এবং ওপেন হওয়ার পর কি ফোন স্লো হয়ে যাচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয় দেখতে হবে। ফোনে কোন ভিডিও প্লে করে দেখতে পারেন তা স্মুথভাবে চলছে কিনা।

প্রসেসর এবং ব্যাটারি

মোবাইল ফোন প্রসেসরের দুনিয়ায় মিডিয়াটেক অনেক পুরনো হয়ে গেছে। যে ফোনে মিডিয়াটেকের প্রসেসর আছে সে ফোন তেমন ফাস্ট আর স্মুথ পারফরমেন্স দেয় না। অন্য দিকে স্নাপড্রাগন প্রসেসর গুলো অনেক ফাস্ট আর পাওয়ারফুল। কোন পুরনো ফোন কেনার আগে অবশ্যই এর প্রসেসর এবং ব্যাটারির ক্ষমতা দেখে কিনবেন। সবসময় চেষ্টা করবেন বর্তমান সময়ের ফোন গুলো কিনতে। কারণ আগের দিনের ফোন গুলোয় বেশীরভাগ মিডিয়াটেক প্রসেসর ইউজ করা হয়েছে।

হার্ডওয়্যার

মানুষ সাধারণত দুইটি সময় ফোন বিক্রি করে। এক যখন নতুন মডেলের ফোন কেনে এবং দুই ফোনে সমস্যা দেখা দিলে। এই দুটো ছাড়া আরও অন্যান্য কারণ আছে কিন্তু এই দুইটি সব থেকে বেশি দেখা যায়। যাইহোক, পুরনো ফোন নেওয়ার আগে এর হার্ডওয়্যার সব ঠিক এবং কার্যক্ষম আছে কিনা তা চেক করে নিবেন। বিশেষ করে ডিসপ্লে, নেটওয়ার্ক আইসি, ক্যামেরা, চার্জার পোর্ট, ব্যাটারি ইত্যাদি। পুরনো ফোনের ভিতরে এগুলো সব ঠিক আছে কিনা এবং কোন কিছু রিপ্লেস করা হয়েছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিবেন।

রিকন্ডিশন বা ক্লোন

বাংলাদেশের বাজারে আইফোন ৭ প্লাসের অফিসিয়াল দাম ৬০ হাজার টাকার মত। কিন্তু ওই সেম ফোন আপনি মাত্র  সাড়ে ৫ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন। আর এটা শুধু ক্লোন করার কারণেই সম্ভব। অরিজিনাল ও ক্লোন ফোনের মধ্যে আপনি শুধু কনফিগারেশন ছাড়া আর কোন অমিল পাবেন না। তো পুরনো ফোনের মার্কেটে এমন ক্লোন এবং রিকন্ডিশন মোবাইলের ছড়াছড়ি। যখন ফোন কিনবেন তখন অবশ্যই এই বিষয় দুটি মাথায় রাখবেন।

ফোনের গ্যাজেট এবং এক্সেসরিজ

ফোন নেওয়ার আগে দেখে নিবেন এর সাথে চার্জার, ক্যাবল, ইয়ারফোন এগুলো আছে কিনা। অথবা থাকলেও অরিজিনাল গুলোই আছে নাকি ডুপ্লিকেট তা চেক করে নিবেন। তবে বেশীরভাগ সময় সবগুলো পুরনো ফোনে থাকে না। না থাকলে আপনি চাইলে ফোনের দাম আরও কমিয়ে নিতে পারবেন। একটা বিষয় ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন যে ফোনের ব্যাটারি অরিজিনাল কিনা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সবসময় চেষ্টা করবেন অরিজিনাল ব্যাটারি আছে এমন ফোন কেনার।

গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র

বাংলাদেশের আইন কানুনে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে যেখানে নতুন ফোন কেনার জন্য তেমন কাগজপত্র প্রয়োজন পড়তো না সেখানে এখন পুরনো ফোন কিনতে সবকিছুই লাগে। যে ফোন কিনবেন তার সকল প্রয়োজনীয় কাজপত্র যেমন শোরুম বা দোকানের রসিদ, ওয়ারেন্টি থাকলে সেই কার্ড, মোবাইলের বক্স ইত্যাদি। এগুলো ডকুমেন্ট ফোনটি যে চোরাই বা অবৈধ না তা প্রমান করে।

নিজে চালিয়ে দেখা

হুট করে কোন ফোন পছন্দ হয়ে গেলো আর কিনে ফেললেন এমন ভুল কোনদিন করবেন না। আগে ফোনটি নিজে অথবা কোন অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে চালিয়ে নিবেন। অর্থাৎ ফোন নিজের হাতে চালিয়ে নিতে হবে। এখানে আপনাকে ফোনের মোটামুটি কিছু বিষয় যেমন ভিডিও প্লে, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, টাচস্ক্রীন, চার্জার পোর্ট, ইয়ারফোন জ্যাক, ইন্টারনেট, সিমকার্ড সার্ভিস ইত্যাদি চেক করে নিতে হবে। বিশেষ করে সিম লাগিয়ে একটু ওয়েট করে দেখবেন যে নেটওয়ার্ক থাকে না চলে যায়। পুরনো ফোন সবসময় সামনাসামনি থেকে কেনার চেষ্টা করবেন। অনলাইনে কিনতে চাইলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ফোনের কোন না কোন পার্টস ডুপ্লিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর একবার আপনি ফোন হাতে পেলে তা আর রিটার্ন দিতে পারবেন না। তবে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে না নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিলে অনেক সময় পরিবর্তন করে নেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে ভালো পুরনো ফোন সরাসরি ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়াই উচিত।

ট্রাস্টেড সেলার

পুরনো ফোন কেনার যত গুলো সতর্কতা আছে এটি তাদের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে সেলারের কাছ থেকে ফোন কিনবেন সে ট্রাস্টেড না হলে অনেক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ পুরনো ফোন কেনার সময় সর্বোচ্চ পরিমাণ সতর্ক থাকতে হয়। ধরুন আপনি যার থেকে ফোন কিনলেন সে আপনাকে চার্জার আর ইয়ারফোন দিতে চেয়ে সময় নিল। কিন্তু এরপর সে যদি আপনার সাথে দেখা না করে অথবা আপনি যদি তার খোঁজ না পান তখন কি হবে? আবার ফোনের সাথে যদি চুরি বা ডাকাতির কোন সম্পর্ক থাকে তখন প্রশাসন যদি আপনাকে ধরে তখন আপনি কাকে দেখিয়ে দিবেন? এরকম ঝামেলা ছাড়াও টাকা রিফান্ড করা বা ফোন সম্পর্কে কমপ্লেইন করার বিষয়ে আপনার সেলারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকতে হবে। সেলার ট্রাস্টেড হলে আপনি অনলাইন বা অফলাইন দুই মাধ্যমেই ফোন কিনতে পারবেন।

অনেকসময় আমরা আমাদের শখের মোবাইল বাজেট কম থাকায় নতুন কিনতে পারি না। তখন পুরনো ফোন আমাদের এক মাত্র ভরসা। কিন্তু পুরনো ফোন কিনতে গিয়ে আমরা উপরে বর্ণিত বিষয় গুলো খেয়াল না করে ঠকে যাই। আশাকরি এই লেখা পড়ে এরপর পুরনো ফোন কিনে আর আপনি ঠকবেন না। কারণ এখানে ১০ টি এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যা পুরনো ফোন কেনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আরও কোন প্রশ্ন বা সাজেশন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *