ওজন কমানোর ১০টি সহজ উপায়

ওজন কমানো অনেকের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ মনে হয়। কারন ওজন বৃদ্ধি হতে সময় লাগে না। একটু বেহিসেবী খাবার আর পরিশ্রমের অভাবে অনেকেরই ওজন বেড়ে যায় খুব সহজে। কিন্তু এই ওজন কমানোটাই হয়ে দাঁড়ায় একটি বড় সমস্যা। অনেকেরই সময়মত নিজের ওজনের দিকে খেয়াল করা হয় না। আর যখন ওজন খুব বেড়ে যায় তখন কমানোর মত সময় পাওয়া যায় না। কারন ওজন কমানো একটি ধৈর্য ও পরিশ্রমের বিষয়। তাছাড়া ছোট বড় নির্বিশেষে সকলেই চায় ওজন কমিয়ে নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে। তাই সময় থাকতে ওজন কমানোর কোনো বিকল্প নেই। 

ওজন বৃদ্ধির কারনে নানা জটিলতাও দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত ওজনের জন্যও অনেক ধরনের মরনব্যধি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। কারন এদের খাদ্য তালিকা অস্বাস্থ্যকর এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাব। তাই আমাদের কাছ থেকে এখনই জেনে নিন ওজন কমানোর উপায় গুলো।

সুস্থ ব্যক্তির ওজন কত থাকা উচিত?

আপনি কি জানেন আদর্শ ওজনের মাপকাঠি কি? ওজন কত হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়? আসলে বয়স, উচ্চতা,শারীরিক অবস্থাার ভিত্তিতে একেক জনের জন্য আদর্শ ওজন একেক রকম। তবে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তির ওজন কত থাকা উচিত তা নির্ণয় করা হয় বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স এর মাধ্যমে।  চলুন জেনে নেয়া যাক বিএমআই এর মাধ্যমে কিভাবে আদর্শ ওজন নির্ণয় করবেন

বিএমআই পদ্ধতিতে আদর্শ ওজন নির্ণয়

শরীরের আদর্শ ওজন নির্ণয় করার জন্য খুবই জনপ্রিয় ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে বিএমআই। এই পদ্ধতিতে ব্যক্তির উচ্চতা ও ওজনের ভিত্তিতে গানিতিক ভাবে আদর্শ ওজন নির্ণয় করা হয়। 

বিএমআই পদ্ধতিতে আদর্শ ওজন নির্ণয়ের সূত্রঃ

বিএমআই= ওজন (কেজি) ÷ উচ্চতা^২ (মিটার)

বিএমআই এর মানের উপর ভিত্তি করেই আদর্শ  ওজন নির্ণয় করা হয়। বিএমআই এর মান

  • ১৮.৫০ বা তার নিচে হলে – ওজন কম
  • ১৮.৫০ – ২৪.৯ এর মধ্যে হলে- ওজন স্বাভাবিক 
  • ২৫ – ২৯.৯ এর মধ্যে হলে- ওজন বেশি
  • ৩০ এর বেশি হলে – স্থূলতা

ওজন বাড়ার কারনঃ

  • জেনেটিক বা বংশগত কারনে স্থুলতা দেখা দেয়। শরীরের গঠনই স্থুল থাকে
  • প্রয়োজনের বেশি খাদ্য গ্রহন
  • কায়িক পরিশ্রম না করা
  • এনার্জি ড্রিংকস, অ্যালকোহল, সফ্ট ড্রিংকস বেশি মাত্রায় পান করা।
  • ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
  • হরমোন জনিত রোগের কারনে
  • গর্ভাবস্থায় 
  • দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করায়।

ওজন বাড়লে কি কি জটিলতা দেখা দেয়

  • ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ব্যক্তি ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিস জনিত অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকিতে থাকেন
  • শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি পায়
  •  হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে
  • অতিরিক্ত ওজনের কারনে অস্থিসন্ধিতে অস্টিওআর্থাইটিস” নামক রোগ দেখা যায় 
  • পিত্তথলিতে পাথর জমতে পারে
  • লিভারের কোষে চর্বি জমে সিরোসিস জাতীয় রোগ হতে পারে
  • খাদ্যনালী, কোলন, লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। 

ওজন কমানোর ১০টি সহজ উপায়

আমরা এতোক্ষণ আলোচনা করলাম ওজন বাড়ার কারণ সম

খাদ্য তালিকা পরিবর্তন

ওজন কমানোর সর্বপ্রথম শর্ত হল খাদ্য তালিকা পরিবর্তন। আপনি প্রতিদিন যেসব খাবার গ্রহন করেন তা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করবেন। ওজন বৃদ্ধি করে এমন খাবার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার বয়স ও শারীরিক চাহিদার থেকে একটুও বেশি ক্যলরি গ্রহন করবেন না। প্রয়জনে পুষ্টিবিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে একটি খাদ্য তালিকা তৈরী করুন।

ব্যয়াম 

ওজন কমাতে চাইলে ব্যয়ামের বা কায়িক পরিশ্রম করতেই হবে। নয়ত আপনার শরীরে জমা বাড়তি ক্যালরি বার্ন হবে না। আপনি হয়ত ডায়েট শুরু করেছেন কিন্তু আগে থেকে জমা হওয়া ক্যালরি খরচ করতে ব্যায়াম আবশ্যক। আপনি জিমে কিংবা ঘরে বসেই সহজ কিছু ব্যায়াম করে ওজন কমাতে পারেন। এছাড়াও একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে হাঁটা। প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘন্টা হাঁটার মত সময় করতে পারলে আপনার ওজন কমানো নিয়ে আর চিন্তা নেই।

মসলাদার খাবার

শুধু সেদ্ধ করা খাবার খাবেন না। ভাল করে রান্না করা এবং গরম মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার খাবেন। কারন হলুদ, জিরা, ধনে গুড়া ইত্যাদি মশলায় এন্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত আছে। যেগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

ওজন কমাতে চাইলে পর্যাপ্ত পানি পান করার কোনো বিকল্প নেই। পানি আপনার শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। আর পানি বিপাকক্রিয়া পরিচালনায়ও সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুমানো

ওজন কমাতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন আছে। কারন রাত জাগা বা অনিদ্রার কারনেও স্থুলতা দেখা দেয় বলে ডাক্তারদের ধারনা৷ তাই দৈনিক ৮ ঘন্টা টানা ঘুমাতেই হবে।

মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা

আপনি কি জানেন এক চা চামচ চিনিতে মোট ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে। আর এই ক্যালরি খরচ না করতে পারলে শরীরে জমে থাকে এবং তা ওজন বৃদ্ধি করে। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার যত তাড়াতাড়ি পারেন বাদ দিন।

রাতের খাবার তারাতাড়ি খাওয়া

রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়াই অনেকের মুটিয়ে যাওয়ার কারন। দেরী করে খাবার খেয়ে এরপর কারো ইচ্ছে করে না ব্যয়াম বা হাটাহাঁটি করতে। তাই রাতের খাবার যতদ্রুত পারেন খেয়ে নিবেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করবেন তারপর শুতে যাবেন।

খাবার বেশিক্ষণ  চিবিয়ে খাওয়া

ওজন কমানোর উপায় জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই এই কথা বলেন যে, খাবার বেশিক্ষণ চিবিয়ে খান। দ্রুত খাবার গ্রহন না করে আস্তে আস্তে খান। কারন তাড়াহুড়ো করে খেলে প্রয়োজনের বেশি খাওয়া হয়ে যায়। আর ভাল ভাবে চিবিয়ে খেলে হজমও দ্রুত হবে।

গ্রীন-টি

ওজন কমাতে গ্রীন-টি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। চিকিৎসকের মতে, আপনি যদি প্রতিদিন ৪ কাপ গ্রীন-টি পান করেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে আপনি অতিরিক্ত ৪০০ ক্যালরি বার্ন করতে পারবেন। গ্রীন-টি এর এমন গুণাবলির কারণ হচ্ছে, এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এজন্য দ্রুত ওজন কমাতে বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন গ্রীন-টি পান করার পরামর্শ দেন।

খাওয়ার আগে পানি পান করা

ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই খাওয়ার আগে বেশি করা পানি পান করে নিন। খাওয়ার আগে পানি পান করলেই যে ওজন কমে যাবে এমন না। তবে পানির কারনে পেট ভরে যাবে এবং অন্য খাবারের জন্য জায়গা কম থাকবে। ফলে আপনার পেট ও ভরা মনে হবে খাবারও কম খাওয়া হবে।

রোজার মাসে ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানোর সময়ে সাবধানতা

ওজন কমানোর সময় আমাদের কিছু সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। যাতে আমরা অসুস্থ্য হয়ে না পরি। আমরা যে সাবধানতা অবলম্বন করবো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ওজন কমানোর জন্য হঠাৎ করেই খাওয়াদাওয়া বেশি কমিয়ে ফেলবেন না।
  • বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত ডায়েট করবেন না 
  • আপনার শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ব্যয়াম করবেন
  • হৃদরোগীরা অতিরিক্ত ভারী ব্যয়াম কখনই করবেন না। 
  • ওজন কমানোর জন্য কোনো ক্ষতিকর ঔষধ বা কেমিক্যাল গ্রহন করবেন না
  • ওজন কমাতে পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার আছে,কিন্তু দিনে ঘুমাবেন না । কিংবা খাওয়ার পর পরই শুয়ে পরবেন না
  • ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সঠিক কারন খুঁজে বের করে বা বের করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

অতিরিক্ত ওজন যে কোন মানুষের জন্য চিন্তার বিষয়। কারন ওজন যতদ্রুত  বৃদ্ধি পায় কমতেও তত বেশি সময় নেয়। ওজন কমানো অনেকর কাছে একটি কঠিন সংগ্রামের মত। আবার যারা ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাদের জন্য খুবই সহজ। আপনিও যদি আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে ওজন কমানোর সঠিক উপায় গুলো জানুন।

আশা করি আমাদের দেয়া, ওজন কমানোর ১০ টি সহজ উপায় আপনার ওজন কমানোর যাত্রাকেও সহজ করে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *